গরীব নেওয়াজ: বাংলা ভাষায় ৫০টি বর্ণ থাকলেও য়-এর মতো ক্ষমতাবান বর্ণ আর একটিও নেই। য়-এর ক্ষমতা এতটাই বেশি যে, এটা একাই সবগুলো স্বরবর্ণকে হটিয়ে দিতে পারে। পরে আসছি সে কথায়। আদিতে বাংলা বর্ণমালায় য় ছিল না। সংস্কৃত ভাষায় য় বলে কোনো বর্ণ বা ধ্বনি নেই। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন বাংলা বর্ণমালা নতুন করে সাজিয়েছিলেন, তখন তিনি য় প্রচলন করেছিলেন। অসমিয়া ভাষায় য় রয়েছে। সেখান থেকে তিনি এটা এনে থাকতে পারেন। আমার ঠিক জানা নেই। য় ছাড়াও বিদ্যাসাগর মহাশয় আরও কয়েকটি বর্ণের প্রচলন করেছিলেন। আগে অনুস্বার ও বিসর্গ স্বরবর্ণের তালিকায় ছিল, তিনি তা ব্যঞ্জনবর্ণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। তা ছাড়া আগে বাংলা ভাষায় যতিচিহ্ন হিসেবে শুধু এক দাঁড়ি, দুই দাঁড়ি প্রচলিত ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় ল্যাটিন থেকে এনে কমা, সেমিকোলন ইত্যাদি সব যতিচিহ্ন প্রচলন করেন।
য়-কে ব্যঞ্জনবর্ণের তালিকায় স্থান দেওয়া হলেও ঋ যেমন উচ্চারণ বৈশিষ্ট্যে স্বরবর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও স্বরবর্ণের তালিকায় স্থান পেয়েছে, তেমনি য় ব্যঞ্জনবর্ণের তালিকার অন্তর্ভুক্ত হলেও এটা যতটুকু না ব্যঞ্জনধ্বনি, তার চেয়ে বেশি স্বরধ্বনি। এটাকে বলা হয় অর্ধস্বরধ্বনি (semi vowel)। আসলে য় হচ্ছে অন্তস্থ-অ। অর্থাৎ এটাও একটি 'অ' তবে অন্তস্হ-অ। যেমন একসময় ছিল অন্তস্থ-ব। বাংলা বর্ণমালা হতে অন্তস্থ-ব বাদ দেওয়া হলেও এর ব্যবহার কিন্তু ঠিকই রয়েছে। বাংলা একাডেমির অভিধান অনুযায়ী য়-কে বাংলা বর্ণমালায় স্বতন্র বর্ণের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, এবং এটিকে হ বর্ণের পরে আরও কয়েকটি অর্ধব্যঞ্জন-অর্ধস্বর বর্ণের সঙ্গে স্থান দেওয়া হয়েছে। উচ্চারণকালে য় বর্ণটি যে-স্বরবর্ণের সঙ্গে যুক্ত থাকে তার উচ্চারণ প্রাপ্ত হয় (যেমন য়+অ=য়, উচ্চারণে অ। যেমন সময়, বিষয় ইত্যাদি শব্দে। য়+আ=য়া, উচ্চারণে আ। যেমন দয়া। এরূপ দয়িত, জয়ী, বায়ু ইত্যাদি)।
য়-এর ক্ষমতার কথা বলছিলাম। য়-এর উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য প্রাপ্তির যে কথা বলা হলো, সেটাই য়-কে ক্ষমতাবান করেছে। এই ক্ষমতায় সে সবকয়টি স্বরবর্ণের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমন আমরা অতি, আমি, ইতি, উহা, এভাবে, ঐরাবত, ওকালতি, ঔষধ না লিখে লিখতে পারি য়তি, য়ামি, য়িতি, য়ুহা, য়েভাবে, য়ৈরাবত, য়োকালতি, য়ৌষধ। উচ্চারণ একইরকম হচ্ছে। স্বরবর্ণযুক্ত সব শব্দই য় দিয়ে লেখা যেতে পারে। অবশ্য স্বরবর্ণ হটাতে পারলেও তার কার হটাতে পারে না। আর কিছু ক্ষেত্রে ই এবং উ-এর বিকল্প হতে পারে না। তথাপি বলা যেতে পারে য়-এর মত ক্ষমতাবান বর্ণ আর একটিও নেই। ১০-৬-২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :