ভূমিকম্পের পর ‘আফটারশক’ কেন হয়, কতবার হতে পারে?
ভূমিকম্পের পর মাটির নিচে জমে থাকা চাপ পুরোপুরি কমে যায় না। মূল ভূমিকম্পের পর যে ছোট ছোট কম্পনগুলো অনুভূত হয়, সেগুলোই আফটারশক নামে পরিচিত। এটি আসলে ভূমিকম্পেরই ধারাবাহিক ক্ষুদ্র প্রতিক্রিয়া।
ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধান ভূমিকম্পে ভূ-পৃষ্ঠ বা ভূগর্ভে সৃষ্ট ফাটল একবারে স্থিতিশীল হয় না। তখন সেই ফাটলের ধার দিয়ে আরও ছোট ছোট শক্তির নির্গমন ঘটে। এর ফলেই রিখটার স্কেলে কম মাত্রার এসব কম্পন অনুভূত হয়, যা আফটারশক নামে পরিচিত।
কখন ও কতবার হতে পারে?
আফটারশক মূল ভূমিকম্পের কয়েক মিনিট পর থেকেই অনুভূত হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিন পরও দেখা যায়।
ভূমিকম্প থেমে গেছে কিন্তু মনে হচ্ছে আবার কাঁপছে? এমন কেন হয়
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) মতে, বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে আফটারশক কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাস বা বছর ধরেও হতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর মাত্রা ও ঘনত্ব কমতে থাকে।
আফটারশকের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। এটি একবার, দশবার, শতবার, এমনকি হাজারবারও হতে পারে। আফটারশক মূলত ভূমিকম্পের মাত্রা, স্থলভাগের গঠন এবং ভূগর্ভস্থ চাপের ওপর নির্ভর করে। বড় ভূমিকম্পের পর বেশি সংখ্যক ও দীর্ঘস্থায়ী আফটারশক দেখা যায়।
ঝুঁকি কতটা?
ভূমিকম্পের পর সাধারণত সবচেয়ে বেশি আফটারশক হয় প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। এই সময়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এই সময় ভবনের বাইরে খোলা জায়গায় থাকতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না।
আফটারশক কখনো বড় ক্ষতির কারণও হতে পারে। বিশেষ করে, যখন মূল ভূমিকম্পে ভবনগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ছোট আফটারশকেও সেগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
অতএব, ভূমিকম্পের পর কেবল একটি বড় কম্পন শেষ হলেই যে সব শেষ, তা নয়—বরং আফটারশকই তৈরি করে পরবর্তী ঝুঁকি ও সতর্কতা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূমিকম্পের পর নিরাপত্তা বজায় রাখতে জনগণকে সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকতে হবে এই আফটারশক নিয়েই।
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া যায়?
বিজ্ঞানীরা কি ভূমিকম্প আগে থেকে নির্ভুলভাবে জানাতে পারেন? সরাসরি উত্তর—না, পারেন না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি অদূর ভবিষ্যতে সম্ভব হবে, এমন আশাও খুব কম। বহু বছর ধরে নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে ভূমিকম্প পূর্বাভাসের চেষ্টা করা হলেও একটিও সফল হয়নি।
তবে ভূতাত্ত্বিকরা কোনো নির্দিষ্ট ফল্ট লাইনে ভবিষ্যতে আবার ভূমিকম্প হবে, এটি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারেন। কারণ ভূগর্ভস্থ স্তরে শক্তি জমতে থাকলে একসময় তা ভূমিকম্পের মাধ্যমেই নির্গত হয়। কিন্তু ঠিক কখন সেই শক্তি মুক্তি পাবে, এটি নির্দিষ্ট করে জানানোর কোনো বৈজ্ঞানিক উপায় এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের সময় নির্ভুলভাবে জানানো সম্ভব না হলেও, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল নির্ধারণ, ভবন নির্মাণের সুরক্ষা বিধি তৈরি এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো যায়।