শিরোনাম
◈ ট‌রে‌ন্টো‌তে হোঁচট খে‌লো মেসির ইন্টার মায়া‌মি ◈ ব্রিটিশ মেয়রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি আত্মীয়-স্বজনের জন্য ‘ভিসা জালিয়াতির’ অভিযোগ ◈ বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ গ্রহণে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করল আইএমএফ ◈ বেনজীরের অর্থপাচার মামলায় মার্কিন নাগরিক এনায়েত ৪ দিনের রিমান্ডে ◈ প্রকাশ্যে নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী, বললেন দেশ ছেড়ে পালাব না ◈ ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট ছাপানো নিয়ে বিতর্ক, যা বললেন উপাচার্য ◈ জনসভায় মৃত্যুর রোল, অবশেষে মুখ খুললেন থালাপতি বিজয় ◈ সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক এগিয়ে নিয়েছি: সিইসি ◈ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা, করা হলো সতর্ক ◈ ড. ইউনুসের কথা শুনে মনে হয়েছিলো, আমি জিয়াউর রহমানের কথা শুনাছিলাম: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:৩৭ দুপুর
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাপানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি: প্রযুক্তি হস্তান্তর ও যৌথ গবেষণায় কী কী সুবিধা পাবে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশের সঙ্গে চলতি বছরের মধ্যে একটি বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করতে আগ্রহী জাপান। চুক্তিটি সই হলে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং যৌথ গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন দুই দেশের কূটনীতিকেরা।

গত মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাপানে দ্বিপক্ষীয় সফর করেন। তখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন তিনি। দুই শীর্ষ নেতার আলোচনায় প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রসঙ্গটি এসেছে।

টোকিওতে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আলোচনায় বাংলাদেশ ও জাপান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর–সংক্রান্ত চুক্তিতে সইয়ের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। সমরাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময় শীর্ষক চুক্তিটি প্রযুক্তি বিনিময়, যৌথ গবেষণা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের পথ সুগম করবে। এটি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ও জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতাবিষয়ক সম্মতিপত্র সই করে। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে টোকিও। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য একটি বিস্তারিত চুক্তি সইয়ের পূর্বশর্ত ছিল ওই সম্মতিপত্র।

আলোচনায় বাংলাদেশ ও জাপান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর–সংক্রান্ত চুক্তিতে সইয়ের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। সমরাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময় শীর্ষক চুক্তিটি প্রযুক্তি বিনিময়, যৌথ গবেষণা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের পথ সুগম করবে। এটি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

জাপানের সঙ্গে চুক্তিতে যা থাকছে

নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা বলছেন, জাপানের সঙ্গে সমরাস্ত্র ও প্রযুক্তি বিনিময়ের চুক্তি বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াবে। তবে এই চুক্তি সইয়ের কারণে চীনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সামরিক সহযোগিতা ও সমরাস্ত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতা বজায় রেখে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাবিষয়ক সহযোগিতা কৌশলগত অংশীদারত্বের পথে অগ্রসর হলে চীনের কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।

জাপানের প্রতিরক্ষা নীতি অনুসরণ করে ‘সমরাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময়’ চুক্তিতে প্রধান তিনটি উপাদান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে:

১. প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম হস্তান্তর: নৌ টহলযান, নজরদারির ব্যবস্থা, যোগাযোগ সরঞ্জাম বা অপ্রাণঘাতী সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ।

২. সাইবার নিরাপত্তা, উপকূলীয় নজরদারি, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ইত্যাদিতে যৌথ গবেষণা।

৩. সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। সমরাস্ত্র তৃতীয় কোনো দেশে হস্তান্তর করা যাবে না এবং ব্যবহারও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে হবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জাপানের সঙ্গে চুক্তি হলে সামুদ্রিক ও সাইবার নিরাপত্তায় বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তিতে বিশেষ সক্ষমতা অর্জন করবে। এটি প্রতিরক্ষা খাতের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থার মান বাড়াবে। তবে একই সঙ্গে ঢাকাকে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে এগোতে হবে।

পরিকল্পিত চুক্তির আওতায় জাপানের কাছ থেকে বাংলাদেশ সমরাস্ত্রের পাশাপাশি প্রতিরক্ষাবিষয়ক প্রযুক্তি পাবে। ফলে প্রতিরক্ষা–সংক্রান্ত চুক্তিটি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইতিবাচক। পাশাপাশি এই চুক্তিতে যেহেতু বাধ্যবাধকতামূলক কোনো শর্ত নেই, তাই আমাদের জন্য সহায়ক: বিআইপিএসএস প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেছিলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জাপান সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি–সম্পর্কিত আইন শিথিল করেছে। এর পর থেকে জাপানের সমরাস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এশিয়ার কয়েকটি দেশে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি শুরু করেছে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত আরও বলেছিলেন, বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ নিয়ে আলোচনার জন্য মিৎসুবিশি ইলেকট্রনিকসের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করেছে। তারা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের সম্ভাব্য পণ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে। মূলত বিমানবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে রাডার ব্যবস্থা বিক্রিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিরক্ষা খাতের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থার মান বাড়াবে। তবে একই সঙ্গে ঢাকাকে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে এগোতে হবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ২০২২ সালের নভেম্বরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরকে সামনে রেখে প্রতিরক্ষা–সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়টি সামনে আসে। যদিও ওই সফর স্থগিত হয়ে যায়। তবে সফরকে সামনে রেখে সমরাস্ত্র বিক্রির বিষয়টি জাপান তুললে বাংলাদেশ আর্থিক সংকটের কথা জানিয়েছিল। তখন জাপান জানিয়েছিল, প্রয়োজন হলে বিশেষ আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে সমরাস্ত্র বিক্রির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যাবে।

জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিকল্পিত চুক্তির আওতায় জাপানের কাছ থেকে বাংলাদেশ সমরাস্ত্রের পাশাপাশি প্রতিরক্ষাবিষয়ক প্রযুক্তি পাবে। ফলে প্রতিরক্ষা–সংক্রান্ত চুক্তিটি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইতিবাচক। পাশাপাশি এই চুক্তিতে যেহেতু বাধ্যবাধকতামূলক কোনো শর্ত নেই, তাই আমাদের জন্য সহায়ক।’

জাপান সমরাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময়বিষয়ক চুক্তিটি ইতিমধ্যে আরও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে করেছে। প্রতিরক্ষা–সংক্রান্ত কয়েকটি দেশের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, জাপান প্রথমবারের মতো ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রতিরক্ষা–সংক্রান্ত চুক্তি সই করে। এই তালিকায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১২তম দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে মঙ্গোলিয়া। ১২টি দেশের মধ্যে এশিয়া মহাদেশের দেশগুলো হচ্ছে ভারত, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও মঙ্গোলিয়া।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১১টি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাবিষয়ক ২০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে চলতি বছরের ১২ আগষ্ট মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি এমওইউ সই হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ১৮ এপ্রিল গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস-বিস) এক সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশ চীন, রাশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, তুরস্ক, ভারত, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাবিষয়ক ১৯টি এমওইউ সই করেছে। ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতি’ শীর্ষক ওই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়