লক্ষ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পরও লিবিয়ার কারাগারে দুই বাংলাদেশি যুবক!
হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি : লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে জিম্মি হয়ে ৪৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়ার পরও এখনো সে দেশের কারাগারে আটক রয়েছেন দুই বাংলাদেশি যুবক। তাদের মুক্তি ও দেশে ফেরত আনার দাবিতে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার( ২৭) দুপুরে উপজেলার রামনগর বিশ্বাসপাড়ায় নাছির মিয়ার বাড়িতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বোয়ালমারী উপজেলার রামনগর গ্রামের মো. ইছাক বিশ্বাসের ছেলে নাছির মিয়া (২৫) ও তার বন্ধু নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার মানিক্কানগর গ্রামের মো. গোফরান ভূঁইয়ার ছেলে সাব্বির হোসেন (২৪) প্রায় দুই বছর আগে বৈধভাবে লিবিয়ায় যান। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর দুজনেই ইতালিতে পাড়ি জমানোর স্বপ্নে স্থানীয় এক দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু সেই দালাল চক্র তাদেরকে ফাঁদে ফেলে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর মাফিয়ারা তাদের পরিবারকে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং টাকা না দিলে হত্যা করার হুমকি দেয়।
পরিবার জানায়, জিম্মিদের নগ্ন করে বেঁধে পেটানোর ভিডিও ও অমানবিক নির্যাতনের বিবরণ পাঠানো হয় তাদের কাছে। প্রাণভয়ে পরিবারের সদস্যরা জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে মোট ৪৭ লাখ টাকা ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাফিয়াদের পাঠান। এরপর মাফিয়ারা তাদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু কিছুদিন পর লিবিয়া পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
নাছির মিয়ার বাবা ইছাক বিশ্বাস বলেন, “আমার ছেলে তিন বছর ধরে লিবিয়ায় ছিল। ভালোই ছিল। হঠাৎ করে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি হয়। আমাদের সর্বস্ব শেষ করে ছেলেকে মুক্ত করলাম, এখন সে আবার কারাগারে! আমরা এখন কী করব?”
সন্তানের কথা বলতে বলতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নাছিরের মা রাশিদা বেগম। চোখের জল মুছতে মুছতে বলছেন, “কবে ফিরবে আমার ছেলেটা, শুধু সেই অপেক্ষায় দিন কাটছে।”
সাব্বিরের বাবা গোফরান ভুঁইয়া বলেন, “দুই বন্ধু একসঙ্গে গিয়েছিল, এখন একসঙ্গে কারাগারে। প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছি, কিন্তু এখনো ওরা বন্দি। আমরা আমাদের ছেলেদের ফিরে চাই। সরকার যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত উভয় পরিবার প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং তাদের সন্তানদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানান।