টেলিযোগাযোগ খাতের অংশীজনদের নানা দাবি-দাওয়ার মধ্যে আলোচিত টেলিকম নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে; যাতে এ খাতে ‘একক নিয়ন্ত্রণ ও মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম’ কমে সুলভে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছে সরকার।
‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং’ নামের এ নীতিমালা বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারের সায় পেয়েছে।
নতুন এ নীতিমালায় চার ধরনের লাইসেন্স দিয়েই টেলিযোগাযোগ খাতের সব সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা চালুর কথা বৈঠক শেষে তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
রাজধানীর সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে নীতিমালার বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স কমানোসহ বেশ কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন।
নীতিমালার সারসংক্ষেপ ব্যাখ্যা করে বিশেষ সহকারী বলেন, ‘এই নীতিমালার মাধ্যমে লাইসেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে স্তরায়ন কমিয়ে আমরা মধ্যস্বত্ত্বভোগী কমিয়ে দেব এবং প্রতিযোগিতামূলক সেবা নিশ্চিত করবো। এতে সরকারের রাজস্ব না কমিয়েও গ্রাহকদেরকে সুলভ মূল্যে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’
লাইসেন্স কমানোর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘বিটিআরসি ২৬ ধরনের লাইসেন্স দিয়ে থাকে। ২৯৯৯টি প্রতিষ্ঠান এসব লাইসেন্স সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে সেবা জনগণের কাছে পৌঁছাতে অতিমাত্রায় স্তরায়ন (মধ্যসত্ত্ব) সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে এই খাতে অতিমাত্রায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।
‘এই ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং পদ্ধতির স্তরায়ন বা মধ্যসত্ত্বভোগীদের স্তরগুলো বাদ দিয়ে মাত্র তিনটি স্তরে নিয়ে আসা হয়েছে। এর পাশাপাশি স্যাটেলাইট নির্ভর টেলিযোগাযোগ সেবার জন্য আরেকটি লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে তিন যোগ এক- চারটি লাইসেন্সের মাধ্যমে দেওয়া যাবে এই খাতের সেবা।’
নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে বিশেষ সহাকারী বলেন, ‘বর্তমান লাইসেন্সিং পদ্ধতিতে মধ্যসত্ত্বভোগী ব্যবস্থা রহিত করে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। এই নীতিমালার মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতে যারা ব্যবসা করেন তাদেরকে সেবার মানের নিশ্চিয়তা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তৃতীয়ত এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা সম্প্রসারণ করে ভয়েস কল ও ডেটা সার্ভিসের মূল্যকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
এ নীতিমালাকে একই সঙ্গে ব্যবসাবান্ধব ও গ্রাহকবান্ধব দাবি করে তিনি বলেন, ‘যারা আইটিসি কিংবা আইআইজি বা আইজিডব্লিউ পর্যায়ে কাজ করতো তারা এখন এক লাইসেন্সে তিন ধরনের কাজই করতে পারবে। অর্থাৎ যারা আইটিসি করতো তারা এখন আইআইজি করতে পারবে, যারা আইজিডব্লিউ করতো তারা এই সবগুলো সেবা দিতে পারবে। ক্যাটাগরিটা বড় করে সেখানে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করেছি।
‘একইভাবে দ্বিতীয় স্তরে ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লেআউট তৈরি করেছি। ফাইবার নেটওয়ার্ক, টাওয়ার ব্যবসা, ডেটা সেন্টারের মত অবকাঠামো খাতে যারা বিনিয়োগ করবে তাদের আগে পৃথক লাইসেন্স নিতে হত। এখন এক লাইসেন্সে তারা সব ব্যবসা করতে পারবে। এর মানে হচ্ছে কারও ব্যবসা বন্ধ হয়নি বরং প্রতিযোগিতা বেড়েছে।’
দেশে আরও মোবাইল ফোন অপারেটর থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অন্য দেশে কয়েক ডজন মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাংলাদেশে মাত্র চারটি। এখানে যাতে আরও কোম্পানি আসতে পারে এবং প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারে সেই বিষয়গুলো আমরা নতুন নীতিমালায় নিশ্চিত করা হয়েছে। একই সাথে প্রাইভেট ফাইভ-জি, ভয়েস ওভার ওয়াইফাই, ওয়াইফাই-৬, ওয়াইফাই-৭ এর মত সেবাগুলো দেওয়া যাবে। এর ফলে আগের চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হবে এবং গ্রাহকরা কম মূল্যে সেবা পাবে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান, আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরীসহ অন্যান্যরা।