বিয়ে জীবনের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তে নারীর মতামত অবহেলা করা অন্যায় ও অমানবিক। বর্তমান সমাজে অনেক সময় নারীর মতামতকে মূল্যায়ন করা হয় না। পারিবারিক মর্যাদা, আত্মীয়তার খাতির কিংবা বাহ্যিক চাকচিক্যের মোহে পড়ে অনেক মেয়েকে জোরপূর্বক বিবাহে বাধ্য করা হয়, যা সম্পূর্ণ অন্যায়। ইসলাম নারীকে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। বিধবা বা ডিভোর্সি নারী বিয়ে সম্পর্কে অভিজ্ঞ হওয়ায় তাকে স্পষ্ট মতামত দিতে হয়। কুমারী মেয়েরা প্রকাশ্যে মতামত দিতে সংকোচ বোধ করলে তার নীরবতাকে সম্মতি হিসেবে গণ্য করা হবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো বিধবা নারীকে তার সম্মতি ছাড়া শাদি দেওয়া যাবে না এবং কুমারি নারীকে তার অনুমতি ছাড়া শাদি দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! কেমন করে তার অনুমতি নেব। তিনি বললেন, তার চুপ করে থাকাটাই তার অনুমতি। ( বুখারি, হাদিস : ৪৭৬৪)
সৎ পাত্রের চার বৈশিষ্ট্য
আজকের যুগে সোশ্যাল মিডিয়া, প্রেমের প্রতারণা এবং বাহ্যিক চাকচিক্যের কারণে অনেক নারী বিভ্রান্ত হয়। ফলস্বরূপ দ্বীনহীন ও দায়িত্বহীন পুরুষকে জীবনসঙ্গী বানিয়ে পরে অনুশোচনার আগুনে পোড়ে। তাই একজন মুসলিম নারীর উচিত আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে ইসলামী ও বাস্তবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে চিন্তা করা এবং পরিবারের অভিজ্ঞদের পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা। পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে চারটি বৈশিষ্ট্যকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
১. দ্বীনদারি
পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম তার দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিতে হয়। কেননা একজন ঈমানদার পুরুষ স্ত্রীকে যেমন নিরাপত্তা ও সম্মান দেয়, তেমনি জান্নাতের পথে সহচর হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের কাছে এমন কেউ বিবাহের প্রস্তাব দেয় যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের পছন্দনীয় হয় তবে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। যদি এরূপ না কর তবে পৃথিবীতে ফিতনা ও বিরাট বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৪)
২. উত্তম আখলাক
আখলাক বা চরিত্র হচ্ছে মানুষের মূল সৌন্দর্য। আখলাকওয়ালা স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে মাধুর্যপূর্ণ আচরণ করে। তাকে কখনো কষ্ট দেয় না। স্ত্রী ভুল করে যদিও তাকে কষ্ট দেয় সেটা হজম করে সে স্ত্রীর মুখে হাসি ফোটায়। তাকে মানসিক প্রশান্তি দান করে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো সে, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম। তোমাদের এ সঙ্গী (অর্থাৎ আমি) যখন মারা যাবে, তার জন্য তোমরা দোয়া করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৯৫)
৩. দায়িত্বশীলতা
প্রত্যেকটি নারী যৌবনে পা রাখার প্রথম থেকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে দায়িত্বশীল একজন সুপুরুষের স্বপ্ন দেখে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর চাহিদার আরো প্রকট হয়। এ রকম পাত্রের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করতে হয়। অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। ঘটকদের আকর্ষণীয় প্রলোভনে না পড়ে এমন দায়িত্বশীল পাত্রের সন্ধান করতে হয়। পারিবারিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বজ্ঞান অপরিহার্য। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, তোমরা সবাই রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের (দায়িত্ব) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তাঁকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের অভিভাবক, তাকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (বুখারি, হাদিস : ৮৪৯)
৪. উপার্জনের সক্ষমতা
বিয়ের সঙ্গে অর্থ-সম্পদের একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে। এই যেমন- দেনমোহর, অলিমা, ভরণপোষণ ও বাসস্থান ইত্যাদি দায়িত্ব পালনের জন্য স্বামীকে সক্ষম হতে হয়। আর এ জন্য হালাল জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম থাকা অপরিহার্য। তবে শুধু প্রবাসী বা সরকারি চাকরিজীবী ছেলে খোঁজার প্রবণতা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিবাহ দাও। আর তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। যদি তারা নিঃস্ব হয় তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সুরা নূর, আয়াত : ৩২)
এই আয়াত প্রমাণ করে, দারিদ্র্য বিবাহের অন্তরায় নয়। বরং আল্লাহ তাআলাই রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন। তাই ধৈর্য ও বিশ্বাস নিয়ে যোগ্য, চরিত্রবান ও দায়িত্বশীল পাত্রের জন্য অপেক্ষা করাই একজন মুসলিম নারীর জন্য শ্রেষ্ঠ করণীয়।
news24bd