শিরোনাম
◈ রাতভর সন্ত্রাসী‌দের তাণ্ডব, বৃহস্প‌তিবার লকডাউন রুখে দি‌তে প্রস্তুত পুলিশ, কী করবে আওয়ামী লীগ?  ◈ আওয়ামী লীগকে নিয়ে রাজনীতিতে ফের অস্থিরতা ◈ বাজি কেলেঙ্কারিতে তুর‌স্কে ১ হাজার ২৪ ফুটবলার নিষিদ্ধ ◈ ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকা‌পে উগান্ডার ইতিহাস  ◈ ঢাকা-সহ আশপাশের জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ◈ দ্বিতীয় দিনে ২.২ ওভার টিকল আয়ারল্যান্ড, ইনিংস শেষ ২৮৬ রানে ◈ ঢাকায় শীতের আগমন, তাপমাত্রা নেমে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ◈ বাংলাদেশ চীন থেকে অস্ত্র কিনলেও নিষেধাজ্ঞার ভয় নেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ ভারতের বিকল্প খুঁজে পেল বাংলাদেশ, পেঁয়াজ আমদানির নতুন ভরসা পাকিস্তান ◈ গুলিস্তানে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ

প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ০৯:১২ সকাল
আপডেট : ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, ভিসা প্রক্রিয়া ও কাজের সুযোগ

আয়ারল্যান্ড, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। ইতিহাস-ঐতিহ্য, অপরূপ প্রকৃতি ও আধুনিক শিক্ষার এক অনন্য মেলবন্ধন রয়েছে এখানে। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এই সদস্য রাষ্ট্রটির বিশ্বের শীর্ষ শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

আবার ওয়ার্ল্ড কিউএস র‍্যাংকিংয়েও আছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তার মধ্যে ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের র‍্যাংক ৮১। ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন ১৭১, গালওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ২৮৯ ও ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক ২৯২তম অবস্থানে রয়েছে। আবার ইউনিভার্সিটি অব লিমেরিক ও ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটি যথাক্রমে রয়েছে ৪২৬ ও ৪৩৬তম অবস্থানে।

ম্যানেজমেন্ট, অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, সাইকোলজি বা মেডিসিন ও হেলথ বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আয়ারল্যান্ড বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের কাছে এক জনপ্রিয় গন্তব্য। তাছাড়া দেশটিতে যাওয়ার জন্য ‘রেস্ট্রিকটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্ট’ বা ‘ব্লক অ্যাকাউন্ট’ এরও প্রয়োজন হয় না। 

আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্টাডি ভিসা’ আবশ্যক। অবশ্য শুধু আয়ার‌ল্যান্ড নয়, বিদেশে পড়াশোনার যাত্রা শুরু করার ক্ষেত্রে এই ভিসাটিই প্রথম ধাপ। নিচে আয়ারল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া, খরচ ও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হলো...

আবেদন প্রক্রিয়া

সাধারণত প্রতি বছরের জানুয়ারি, মে-জুন ও সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দিয়ে থাকে আয়ারল্যান্ড। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো, সেপ্টেম্বর ইনটেক।

আয়ারল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হয় অনলাইনে, স্বয়ংক্রিয় ভিসা আবেদন এবং ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে (অ্যাভাটাস)। আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়তে ইচ্ছুক, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েই আবেদন করতে পারবেন।

অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। আবেদন ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে।

ফর্ম পূরণের পর সয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং সিস্টেম জানিয়ে দেবে যে আপনার সহায়ক নথিপত্র কোথায় পাঠাতে হবে (ভিসা অফিস, দূতাবাস বা কনস্যুলেটে)। সব নথি নির্ধারিত স্থানে পাঠানোর পরই ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আয়ারল্যান্ডে ভ্রমণের ৩ মাস আগে অনলাইনে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করার পর সারসংক্ষেপ ফর্মটি প্রিন্ট করে স্বাক্ষর ও তারিখসহ জমা দিতে হবে প্রয়োজনীয় নথিপত্রের সঙ্গে।

ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় বায়োমেট্রিক তথ্য (ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি) দিতে হয়। এটি নিরাপত্তাজনিত কারণে আবেদনকারীর পরিচয় যাচাইয়ে ব্যবহৃত হয়। তবে এই প্রক্রিয়ায় কোনো সাক্ষাৎকার দিতে হয় না।

স্টুডেন্ট ভিসাটি শিক্ষাক্রমের মেয়াদকাল পর্যন্ত বৈধ থাকে। যদি ডিগ্রি প্রোগ্রাম দীর্ঘ হয়, তবে প্রতি বছর ভিসা নবায়ন করতে হবে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর আয়ারল্যান্ডে থাকতে চাইলে আলাদা ভিসা বা নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে স্থানীয় অভিবাসন দপ্তরে।

ভিসা ফি

আয়ারল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসার দুটি ধরণ রয়েছে-

সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা, যার ফি ৬০ ইউরো বা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা। আরেকটি হলো মাল্টি এন্ট্রি ভিসা, যার ফি ১০০ ইউরো বা ১৪ হাজার টাকার কিছু বেশি। মঙ্গলবারের (১১ নভেম্ব, ২০২৫) হিসাবে এক ইউরো = ১৪১.১৯ টাকা।

যদি আপনার পড়াশোনার অংশ হিসেবে অন্য দেশে যাওয়া প্রয়োজন হয়, তাহলে মাল্টি এন্ট্রি ভিসা নিতে হবে।

পরিস্থিতিভেদে এই ফি অনলাইনে, বাংলাদেশের ভিসা আবেদন কেন্দ্রে বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। তবে ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো ও উগান্ডার মতো কিছু দেশ এই ফি থেকে মুক্ত।

এছাড়া ভিসা পেতে স্বাস্থ্য বীমা করাতে হয়, যা আয়ারল্যান্ডে অবস্থানকালীন চিকিৎসা ব্যয়ের সুরক্ষা দেয়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আয়ারল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে নিচের নথিগুলো জমা দিতে হবে—

• বৈধ পাসপোর্ট – আপনার পাসপোর্টে আয়ারল্যান্ডে আগমনের তারিখ থেকে অন্তত ১২ মাস মেয়াদ থাকতে হবে।
• দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি – সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্টধর্মী ছবি।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসেপ্টেন্স লেটার – আয়ারল্যান্ডের যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার বা স্বীকৃতি পত্র।
• আবেদনপত্র – কেন আয়ারল্যান্ডে পড়তে যেতে চান, আপনার নির্বাচিত কোর্স ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত বা • আপনার পেশাগত পথ পরিবর্তনের কারণ কী—এটি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া ভিসার শর্তাবলি মেনে চলার প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে।
• আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ – পড়াশোনার সময় নিজের ব্যয়ভার বহন করতে পারবেন তা প্রমাণ করতে হবে। নিজের অথবা মা কিংবা বাবার নামে ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে।
• স্বাস্থ্যবীমার প্রমাণপত্র – আয়ারল্যান্ডে অবস্থানকালীন চিকিৎসা সুরক্ষার জন্য বৈধ স্বাস্থ্যবীমা দেখাতে হবে।
• শিক্ষাগত ও ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র – আপনার একাডেমিক যোগ্যতা ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
• ফি পরিশোধের প্রমাণ – ভর্তি বা টিউশন ফি পরিশোধ করেছেন, তার রসিদ বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
• শিক্ষাজীবনের বিরতি থাকলে তার ব্যাখ্যা।
• পূর্ববর্তী কোনো ভিসা প্রত্যাখ্যানের তথ্য থাকলে তা উল্লেখ করতে হবে।
সব নথি ইংরেজি বা আইরিশ ভাষায় জমা দিতে হবে। মূল কাগজপত্র জমা দিতে হয়, শুধুমাত্র যেখানে উল্লেখ থাকবে সেখানেই ফটোকপি গ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়, যাতে তারা আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রমে সফলভাবে অংশ নিতে পারে ও আয়ারল্যান্ডে দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগে সমস্যায় না পড়ে।

তবে শিক্ষার্থীদের আগে থেকে কোনো মেডিকেল টেস্ট দিতে হয় না ও ‘রেস্ট্রিকটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্ট’ বা ‘ব্লক অ্যাকাউন্ট’ এরও প্রয়োজন নেই।

সময়সীমা

সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার ৮ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। বিস্তারিত ও সর্বশেষ তথ্য জানতে আয়ারল্যান্ডের ইমিগ্রেশন বিভাগের সরকারি ওয়েবসাইটে ভিসা সংক্রান্ত নির্দেশনা দেখা যেতে পারে।

যোগ্যতা

আয়ারল্যান্ডে ব্যাচেলর অর্থাৎ স্নাতক করতে এএসএসি ও এইচএসসিতে দুটোতেই ন্যূনতম জিপিএ লাগবে ৪ করে। কিছু ক্ষেত্রে কম হলেও সুযোগ খুবই সীমিত।

আর মাস্টার্স বা স্নাতোকত্তর করতে সিজিপিএ লাগবে কমপক্ষে ৩.০০

আয়ারল্যান্ডে আইইএলটিএস ছাড়া স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়াটা একপ্রকার অসম্ভবই। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় টোওফেল, ডুয়োলিঙ্গ, পিটিই ও ক্যাম্ব্রিজ ইংলিশ পরীক্ষার ফলাফল আমলে নেয়। আয়ারল্যান্ডে এমওআই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে আইইএলটিএস স্কোর কম হলে ব্যাকআপ হিসিবে এমওআইয়ের রেজাল্ট দেখানো যায়।

ব্যাচেলরের ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোর ৬ থেকে ৬.৫, টোওফেল স্কোর ৮০-৯০ ও ডুয়োলিঙ্গের ক্ষেত্রে ১০৫ থেকে ১১০ লাগবে।

অন্যদিকে, মাস্টার্সের জন্য আইইএলটিএসে ৬.৫ থেকে ৭, টোওফেলে ৯০-১০০ ও ডুয়োলিঙ্গের ক্ষেত্রে ১১০ থেকে ১২০ স্কোর লাগবে

টিউশন ফি:

ব্যাচেলরে বছরপ্রতি খরচ হবে ৯ হাজার থেকে ১৩ হাজার ইউরো। আর মাস্টার্সে এই খরচ থাকবে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার ইউরোর মধ্যে।

আয়ারল্যান্ডের শীর্ষ কয়েকটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়:

• ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন
• ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন
• ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটি
• ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক
• টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি ডাবলিন (টিইউ ডাবলিন)
• ইউনিভার্সিটি অব লিমেরিক
• আমেরিকান কলেজ ডাবলিন
• মায়নুথ বিশ্ববিদ্যালয়
• কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট
• আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গালওয়ে
• গালওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: জাগো নিউস ২৪ 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়