প্রায় এক মাস আগে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও গাজায় মৃত্যুর মিছিল থামেনি। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও লাশ উদ্ধারের পর শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ১৬৯ জনে।
মন্ত্রণালয় জানায়, যুদ্ধবিরতির পর গত এক মাসেই ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শনিবারও নতুন করে বেশ কিছু হত্যার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, উত্তর গাজায় তাদের অবস্থানের দিকে এগিয়ে আসায় ‘ইয়েলো লাইন’ অতিক্রমকারী এক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এই ইয়েলো লাইনটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ, যেখানে ইসরায়েল সেনাদের পিছু হটার কথা ছিল।
দক্ষিণ গাজাতেও একইভাবে ‘ইয়েলো লাইন’ অতিক্রমের অভিযোগে আরও একজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। শুধু তাই নয়, সীমারেখার কাছাকাছি গেলে সাধারণ ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকেও লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
শনিবার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলে যাওয়া একটি বিস্ফোরক যন্ত্রে প্রাণ হারিয়েছে এক ফিলিস্তিনি শিশু। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জরুরি চিকিৎসা চালু রাখতে গাজা-মিশর সীমান্তের রাফা ক্রসিং পুনরায় খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, প্রায় চার হাজার রোগী ইতিমধ্যে রাফা দিয়ে মিশর বা অন্যান্য দেশে চিকিৎসার জন্য গেছেন। কিন্তু আরও ১৬ হাজার ৫০০ রোগী এখনো বিদেশে চিকিৎসার অপেক্ষায় আছেন।
ডব্লিউএইচও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানায়, ‘রাফা ক্রসিং চিকিৎসা সরবরাহ ও রোগী স্থানান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিশর এখনো জরুরি চিকিৎসার অন্যতম গন্তব্য।’
অন্যদিকে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা অভিযান ও ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হামলা অব্যাহত রয়েছে। নাবলুসের দক্ষিণে বেইতা শহরে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা সংঘর্ষে জড়ায়, যখন স্থানীয়রা জলপাই সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন।
ইসরায়েলি কর্মী ও বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্য জোনাথন পোলাক আল জাজিরাকে জানান, মুখোশধারী কয়েক ডজন ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ক্লাব ও পাথর নিয়ে ফিলিস্তিনি গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হন, যাদের মধ্যে একজন সাংবাদিক ও ৭০ বছর বয়সী এক কর্মীর চোয়াল ও গালের হাড় ভেঙে যায়।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন জানায়, ওই হামলায় পাঁচ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। ঘটনাটিকে তারা ‘সাংবাদিকদের হত্যার উদ্দেশ্যে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স নিশ্চিত করেছে, তাদের দুই কর্মীও আহতদের মধ্যে ছিলেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিম তীরের ৭০টি শহর ও গ্রামে অন্তত ১২৬টি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে চার হাজারের বেশি জলপাইগাছ কেটে ফেলা বা নষ্ট করা হয়েছে। শনিবারও জেনিনের দক্ষিণ-পূর্বে রাবা গ্রামে বসতি স্থাপনকারীরা ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় ফিলিস্তিনি বাড়িঘরে হামলা চালায়।
এছাড়া ফারাআ শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে একজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে আহত করেছে সেনারা। জেনিনের কাছে ইয়াবাদ শহরে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরকে রাস্তায় মারধর করে আটক করেছে তারা। একইভাবে রামাল্লাহর কাছের মাজরাআ আশ-শারকিয়া শহর থেকেও একজন যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের উত্তরের আর-রাম এলাকায় এক ফিলিস্তিনিকে পায়ে গুলি করে আহত করেছে সেনারা। রাতে নাবলুসের পূর্বে সালেম গ্রামের ইজ আল-দিন আল-কাসসাম মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের দিকে গ্যাস ছোড়ার ঘটনায় বহু মানুষ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছেন।
সূত্র: ইত্তেফাক