শিরোনাম
◈ টেকনাফের গহীন পাহাড়ে মানবপাচার চক্রের ঘাঁটিতে অভিযান, ৮৪ জন উদ্ধার ◈ ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া আর কানাডার স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ কী? ◈ লাগাম টানা হলো পুলিশের গ্রেপ্তারি ক্ষমতায়, ১২৭ বছরের পুরোনো ফৌজদারি কার্যবিধিতে বড় পরিবর্তন (ভিডিও) ◈ রাজনৈতিক দলের ৬ নেতাসহ ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ এ‌শিয়া কা‌পে সুপার ফোরেও ভারতের কাছে দিশাহারা পাকিস্তান, হার‌লো ৬ উই‌কে‌টে ◈ ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্য-কানাডা-অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতি, যা বললেন নেতানিয়াহু ◈ ফেসবুক নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে নির্দেশনা দিলো ঢাকা কলেজ ◈ পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৯ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ দুই সেনা কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ ◈ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পের সেমিফাইনা‌লে বাংলাদেশ 

প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:০৫ রাত
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া আর কানাডার স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ কী?

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া আর কানাডা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্স সহ আরো কয়েকটি দেশ সামনের কয়েকদিনের মধ্যে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগেই বলেছেন যে এই সিদ্ধান্ত 'হামাসের সন্ত্রাসবাদ' এর উপহার হিসেবে বিবেচিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রও শক্তভাবে এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে।

কিন্তু এই স্বীকৃতির আসলে অর্থ কী? এর ফলে কী পরিবর্তন হতে পারে?

এই স্বীকৃতির অর্থ কী?
কাগজে কলমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলে কিছু নেই। তবে রাষ্ট্র হিসেবে বহু দেশ এই ভূখণ্ডকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে, বিভিন্ন দেশে এই দেশের কূটনৈতিক মিশনও রয়েছে।

অলিম্পিক সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করে তারা।

কিন্তু ইসরায়েলের সাথে ফিলিস্তিনের দীর্ঘসময়ের বিরোধের কারণে ফিলিস্তিনের কোনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা, রাজধানী বা সেনাবাহিনী নেই।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর বহু বছরের দখলদারিত্ব চলার পর ১৯৯০'এর দশকে 'প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি' বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়, যাদের ঐ ভূখণ্ড ও সেখানে বসবাসরত মানুষের ওপর পূর্ণ নিয়ণ্ত্রণ নেই। ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজা এখন যুদ্ধক্ষেত্র।

কাজেই এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়া অনেকটাই প্রতীকী। নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করলে এটি বেশ শক্ত পদক্ষেপ, কিন্তু বাস্তবতা হলো – এই সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি খুব একটা পরিবর্তন হবে না।

তবে এই প্রতীকী পদক্ষেপও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জুলাইয়ে জাতিসংঘে এক ভাষণে বলেছিলেন: "দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থনে ব্রিটেন একটি বিশেষ দায়বদ্ধতা অনুভব করে।"

সেসময় তিনি ১৯১৭ সালের ব্যালফোর সনদের উল্লেখ করেন। তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার ব্যালফোরের তত্বাবধানে ঐ সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার সময় 'ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় আবাস প্রতিষ্ঠার' বিষয়টি সমর্থন করেছিল যুক্তরাজ্য।

ঐ সনদে উল্লেখ করা ছিল যে 'ফিলিস্তিনে থাকা ইহুদি নয় এমন মানুষের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষুন্ন করে' এমন কোনো কার্যক্রম সেখানে পরিচালনা করা যাবে না।

একসময় ফিলিস্তিন হিসেবে পরিচিত ঐ ভূখণ্ড ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত লিগ অব নেশনসের এক ম্যান্ডেটের আওতায় বৃটিশরা শাসন করে।

এরপর ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র তৈরি হয়। ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াসও চলতে থাকে।

ডেভিড ল্যামি'র মত বহু রাজনীতিবিদ 'দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান' পঙক্তিটি বারবার ব্যবহার করে গেছেন।

এই পঙক্তিটি দ্বারা বোঝানো হয় পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হবে।

১৯৬৭ সালের ইসরায়েল-আরব যুদ্ধের আগে ঐ অঞ্চল যেভাবে বিভক্ত ছিল, সেই বিভক্তির ভিত্তিতেই দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে বলে বলা হয়ে আসছিল। ১৯৬৭ সালে যুদ্ধের পর ইসরায়েলের দখলে চলে যাওয়া পূর্ব জেরুজালেমের হওয়ার কথা ছিল ফিলিস্তিনের রাজধানী।

তবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ক্ষেত্রে বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক প্রয়াস চলমান থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি। আর এর মধ্যে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ দখল যত বেড়েছে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান কথাটি দিনদিন ফাঁপা বুলি হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

ফিলিস্তিনকে কারা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে?
জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রায় ৭৫ ভাগই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ 'স্থায়ী পর্যবেক্ষক' হিসেবে। এর অর্থ তারা জাতিসংঘের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে, কিন্তু কোনো বিষয়ে ভোট দিতে পারবে না।

ব্রিটিশ আর ফরাসীদের স্বীকৃতির পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের চারটির সমর্থনই পাবে ফিলিস্তিন।

চীন আর রাশিয়া ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সেটি হলে, ইসরায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়বে।

ওয়াশিংটন মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন 'প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি' বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে স্বীকৃতি দেয়, যেটি ১৯৯০ এর দশকে গঠিত হয়েছিল।

ঐ ঘটনার পর থেকে অনেক দেশের প্রেসিডেন্টই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের মধ্যে পড়েন না। মি. ট্রাম্পের দুই দফার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি দৃশ্যমানভাবেই ইসরায়েলপন্থী ছিল।

যুক্তরাজ্য সহ অন্যান্য দেশ এখন কেন স্বীকৃতি দিচ্ছে?

এর আগে বেশ কয়েকবার ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আলোচনা করেছে। তবে তারা অন্যান্য পশ্চিমা মিত্র দেশের সাথে একত্রিত হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার পন্থা হিসেবে এই আলোচনা করেছে।

তারা এমন সময় এই পদক্ষেপ নিতে চেয়েছে যখন 'তা সর্বোচ্চ প্রভাব' তৈরি করবে।

যুক্তরাজ্যের সরকার বিশ্বাস করে, শুধু প্রতীকীভাবে এই পদক্ষেপ নেয়া তাদের ভুল হবে।

সেক্ষেত্রে ঐ পদক্ষেপকে মানুষ নৈতিকভাবে সমর্থন করলেও বাস্তবে তা কোনো পরিবর্তন আনবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা
ট্রাম্প প্রশাসন সবসময়ই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধিতা করে এসেছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন যে 'ঐ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর (যুক্তরাজ্যের) সাথে তার মতানৈক্য' রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে একেবারেই বিরোধী, তা উঠে এসেছে তাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে।

জুনে ইসরায়েলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি মন্তব্য করেন যে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা করে না বলেই মনে করেন তিনি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মন্তব্য করেছেন যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রয়াসে নিজেদের 'শক্তিশালী অনুভব করবে হামাস।'

মি. রুবিও এমনও মন্তব্য করেছিলেন যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার আলোচনা ইসরায়েলকে প্ররোচিত করবে পশ্চিম তীর আলাদা করে দেয়ার লক্ষ্যে।

তবে বোঝাই যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিরোধিতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার এই পদক্ষেপ নিতে বিভিন্ন দেশের সরকারকে থামাতে পারেনি।

গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের চিত্র, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ক্রমাগত আগ্রাসনের কারণে বাড়তে থাকা ক্ষোভ আর এসবের ধারাবাহিকতায় মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া প্রভাবের মত বিষয়গুলোর কারণে বিভিন্ন দেশের সরকার এই পর্যায়ে এসেছে।

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়