শিরোনাম

প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:২৮ বিকাল
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:২৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এবার বিক্ষোভে উত্তাল এশিয়ার আরেক দেশ

সম্প্রতি নেপাল, পূর্ব তিমুরের পর এবার এশিয়ার আরেক দেশ ফিলিপাইনে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী ম্যানিলার বিভিন্ন এলাকায় এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) হাজার হাজার ফিলিপিনো একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছে। সরকারের মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবার উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটি। খবর ব্যাংকক টাইমসের। 

বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবির মধ্যের ছিল প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের জুলাই মাসের ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া, যেখানে তিনি কার্যত স্বীকার করেন যে, বেশ কিছু সরকারি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প দুর্নীতির কবলে পড়েছে। দুর্নীতি দীর্ঘকাল ধরে ফিলিপাইনে একটি গুরুতর সমস্যা হলেও, বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে এই দুর্নীতির অভিযোগ অনেকের মনে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। কারণ এই প্রকল্পগুলো ছিল বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগ-প্রবণ দেশ হিসেবে ফিলিপাইনের বন্যার ক্ষতি কমানোর জন্য।

প্রতিবাদকারী নেতা ফ্রান্সিস অ্যাকুইনো ডি বলেন, 'যেখানে কিছু মানুষ বন্যা এবং ঝড়ের কারণে ভুগছে, সেখানে কিছু মানুষ এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের বিলাসী জীবনযাপন দেখাচ্ছে।' 

এদিকে, দুর্নীতির অভিযোগ এবং তারপরে জনগণের উত্তেজনা সত্ত্বেও ফিলিপাইনের আর্থিক বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। আগস্ট মাসে ফিলিপাইনের পেসো ডলারের বিপরীতে বেশ স্থিতিশীল ছিল এবং শেয়ারবাজার সূচক প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে।

 এসব বিক্ষোভ যখন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও উত্তেজনা বেড়ে গেছে। ইন্দোনেশিয়ায় রাজনৈতিক নেতাদের জন্য সুবিধার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল, যেখানে গত মাসে পুলিশের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে ২১ বছরের এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়। 

এশিয়ার দেশ নেপালে, এই মাসে প্রধানত কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীদের নেতৃত্বে সহিংস বিক্ষোভের ফলে দেশের শীর্ষ নেতারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীরা ম্যানিলার প্রধান সড়কে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সমাবেশের অনুমান করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে মারকোস সরকারের পতন ঘটানো সেই বিপ্লবের স্থানটি ছিল এটি, যা ফিলিপাইনে বৃহত্তম এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় সরকার বলেছে, ম্যানিলার একটি পাবলিক পার্কে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছিল এবং সেখান থেকে মিছিল করে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। দেশব্যাপী একই ধরনের প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে শিক্ষার্থী, ধর্মীয় নেতারা, প্রতিবাদী সংগঠন এবং কিছু আইনপ্রণেতার অংশগ্রহণ ছিল।

 প্রেসিডেন্ট মার্কোস এসব বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তবে সতর্ক করে বলেছেন যে, যদি এই বিক্ষোভগুলো সহিংসতায় রূপ নেয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নেবে। পুলিশ জানায়, রোববারের বিক্ষোভগুলো অধিকাংশ সময় শান্তিপূর্ণ ছিল, তবে কিছু উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।
 
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ জন, তাদের মধ্যে কিছু আহত ব্যক্তিও, গ্রেপ্তার হয়েছেন যখন ম্যানিলার একটি এলাকায় একটি কনটেইনার ভস্মীভূত করা হয়। 

এই মাসের শুরুর দিকে, মার্কোস একটি স্বাধীন সংস্থা গঠন করেছিলেন যা ফিলিপাইনের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কি পরিমাণ অর্থ চুরি হয়েছে তা নির্ধারণ করবে। ফ্লাড কন্ট্রোল প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত শত শত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে এবং প্রেসিডেন্টের চাচাত ভাই হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন, যদিও তিনি এই দুর্নীতির সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

প্রতিবাদে যোগ দিয়ে কংগ্রেসম্যান চেল ডিওকনো বলেন, প্রতিবাদের লক্ষ্য হল দুর্নীতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আনা। তিনি বলেন, 'যে কেউ অভিযুক্ত হলে, তার রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, যদি তারা অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত হন, তাহলে তাদের শাস্তি পেতেই হবে।'

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়