শিরোনাম
◈ প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনডিএ: কেন, কিভাবে, কতটা যৌক্তিক? ◈ ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল অর্থনীতির অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ: আশিক চৌধুরী ◈ যশোরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে  বিএনপির ৬ নেতা, কর্মীকে বহিঃস্কার ◈ জুয়ার আসর থেকে ইউনিয়ন জামাতের সভাপতি ও ইউপি সদস্যসহ গ্রেপ্তার ১৪ ◈ ৬০০০ রানের মাইলফলকে জো রুট ◈ জুলাই অভ্যুত্থানের গেজেট থেকে ৮ শহীদের নাম বাদ, তালিকা প্রকাশ ◈ এনসিপির ইশতেহার ঘোষণা, ছাত্রদলের সমাবেশে নির্বাচনমুখী বক্তব্য ◈ ১০ লাখ টাকার বেশি আমানত ও সঞ্চয়পত্রে রিটার্ন বাধ্যতামূলক ◈ জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠান: এবার ৮ জোড়া ট্রেন ভাড়া করল সরকার ◈ কুমিল্লায় ইউপি সদস্যকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা

প্রকাশিত : ০৪ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৩৬ রাত
আপডেট : ০৪ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অ্যালার্জি থেকে মুক্তির পথ: চিকিৎসায় আসছে নতুন সম্ভাবনা

ধুলাবালি কিংবা খাবারে অ্যালার্জি এখন একেবারে সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের মধ্যে খাবারে অ্যালার্জির হার ছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই দেখা যাচ্ছে এ প্রবণতা। তবে খুশির খবর হলো, এখন অ্যালার্জি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গবেষকেরা কার্যকরী কিছু উপায় বের করেছেন। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণের চিকিৎসা বর্তমানে সহজলভ্য ও নিরাপদ।

অ্যালার্জির পেছনে দায়ী আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম। অনেকের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুল করে খাবারের বিভিন্ন উপাদানকে ক্ষতিকর মনে করে। এর ফলে ইমিউনোগ্লোবুলিন ই (আইজিই) নামের এক ধরনের অ্যান্টিবডি অ্যালার্জেনের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এই অ্যান্টিবডি স্বাভাবিকভাবে আমাদের রক্ষা করে, কিন্তু অ্যালার্জির ক্ষেত্রে এটিই ডেকে আনতে পারে বিপদ।  

অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থকে অ্যালার্জেন বলে। অ্যালার্জেন শরীরে প্রবেশ করলেই আইজিই সক্রিয় হয় এবং হিস্টামিন নামের রাসায়নিক নিঃসৃত হয়। সাধারণত এই রাসায়নিক কাশি, কফ বা শ্লেষ্মা তৈরি করে। কিন্তু অ্যালার্জির ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াটি অতিমাত্রায় হয়। এতে হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্ট, চুলকানি কিংবা ফুসকুড়ির মতো লক্ষণ দেখা দেয়। কখনো কখনো পুরো শরীরজুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যাকে বলা হয় অ্যানাফাইল্যাকটিক শক। এর ফলে শ্বাস–প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো ভয়ানক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এই প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে ইমিউনোথেরাপির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এতে খুব সামান্য পরিমাণ অ্যালার্জেন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করে ধাপে ধাপে মাত্রা বাড়ানো হয়। ধুলাবালি বা ফুলের রেণুর মতো সাধারণ অ্যালার্জির ক্ষেত্রে ড্রপ, ইনজেকশন বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে দেওয়া এই চিকিৎসা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

খাবারের অ্যালার্জির চিকিৎসায় অগ্রগতি কিছুটা ধীরগতির, কারণ এতে অ্যানাফাইল্যাকসিসের ঝুঁকি বেশি। তবে গত কয়েক বছরে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। ২০২০ সালে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) শিশুদের জন্য চীনাবাদামে অ্যালার্জি চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার ওষুধের অনুমোদন দেয়। এই ওষুধে সামান্য বাদাম প্রোটিন থাকায় শরীর ধীরে ধীরে সহনশীল হয়ে ওঠে। তবে মাত্রা বাড়াতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

অ্যালার্জি চিকিৎসায় আরও নিরাপদ সহনশীলতা তৈরির পথ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এখন পেপটাইড নামের অ্যালার্জেন প্রোটিনের ছোট খণ্ডাংশ দিয়ে নতুন ধরনের ইমিউনোথেরাপি নিয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা। এতে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সহনশীলতা তৈরি হচ্ছে বলে দেখা গেছে।

অন্যদিকে আরেকটি সম্ভাবনাময় পদ্ধতি হলো আইজিই অ্যান্টিবডিকে প্রতিহত করা। ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ওমালিজুম্যাব নামের একটি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি টানা ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহ সেবনের পর অ্যালার্জিপ্রবণ ১১৮ জনের মধ্যে ৭৯ জনই ৬০০ মিলিগ্রাম অ্যালার্জেন গ্রহণে সক্ষম হন। 

যেহেতু ওষুধটির কার্যকারিতা বজায় রাখতে নিয়মিত সেবন দরকার, তাই গবেষকেরা মনে করছেন, ওমালিজুম্যাব ও ইমিউনোথেরাপি একত্রে প্রয়োগ করলে সহনশীলতা আরও নিরাপদ ও দ্রুত গড়ে তোলা সম্ভব।

এই চিকিৎসায় অগ্রগতি বিশেষভাবে উপকারে আসছে প্রাপ্তবয়স্কদের, যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কম নমনীয় হয় এবং যারা সাধারণত এসব গবেষণায় অংশ নেন না। তবে এ চিত্রও বদলাচ্ছে। ২০২৪ সালের ওমালিজুম্যাব গবেষণায় কিছু প্রাপ্তবয়স্ক অংশ নিয়েছেন। চলতি বছরের এপ্রিলে শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়েই পরিচালিত এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, সতর্কভাবে পরিচালিত মুখে খাওয়ার ইমিউনোথেরাপিতে রোগীরা দিনে চারটি চীনাবাদাম পর্যন্ত খেতে পারছেন। অর্থাৎ যাদের এই খাবারে অ্যালার্জি আছে, তারা যদি প্রতিদিন একটু একটু করে খান, তাহলে বাদামের প্রতি অ্যালার্জি কমতে পারে। 

তবে গবেষকেরা বলছেন, এটি এখনো প্রাথমিক গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। এই পদ্ধতি পুরোপুরি কাজ করে কি না, তা বুঝতে আরও বড় পরিসরে গবেষণা দরকার।  তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, নিউ সায়েন্টিস্ট

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়