আমাদের শরীর যেকোনো গুরুতর অসুস্থতার আগেই বিভিন্ন সংকেত পাঠাতে শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রেই এর প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পায় আমাদের পায়ে। পায়ের ত্বক, নখ কিংবা রঙের সামান্য পরিবর্তনও হতে পারে হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা বা নিউরোলজিক্যাল (স্নায়ু) রোগের মতো জটিল অসুস্থতার প্রাথমিক ইঙ্গিত। তাই পায়ের সমস্যাকে সাধারণ ভেবে অবহেলা করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
জনপ্রিয় পুষ্টিবিদ নুপুর পাতিল হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “পা আমাদের স্বাস্থ্যের আয়নার মতো কাজ করে। এটি কখনও পুষ্টির ঘাটতির সংকেত দেয়, আবার কখনও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর চাপ বা জটিলতার ইঙ্গিত দেয়।”
যে লক্ষণগুলো দেখলে সতর্ক হবেন:
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে গুরুতর রোগের প্রাথমিক পর্যায়।
১. পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া:
যদি আপনার পা প্রায়শই ঠান্ডা থাকে, তবে এটি শরীরে দুর্বল রক্ত সঞ্চালনের লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া আয়রন বা আয়োডিনের ঘাটতি (যা থাইরয়েডের সমস্যা তৈরি করে) হলেও এই উপসর্গ দেখা দেয়।
২. পায়ের ত্বক ফেটে যাওয়া:
অনেকেরই সারা বছর পা ফাটার সমস্যা থাকে। এটি শরীরে ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন), জিঙ্ক বা আয়রনের ঘাটতির স্পষ্ট ইঙ্গিত। এই পুষ্টি উপাদানগুলো ত্বকের স্বাস্থ্য ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে অপরিহার্য।
৩. পেশিতে টান ধরা:
পায়ের পেশিতে বারবার টান বা খিঁচুনি হওয়া ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির একটি সাধারণ লক্ষণ। স্নায়ু ও পেশির স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য ম্যাগনেসিয়াম অত্যন্ত জরুরি।
৪. পা ফুলে যাওয়া:
পা বা গোড়ালি ফুলে যাওয়াকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। এটি কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়া, হৃদরোগ (হার্ট ফেইলিওর) বা লিভারের সমস্যার মতো গুরুতর অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় বা দীর্ঘক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসলেও সাময়িকভাবে পা ফুলতে পারে।
৫. অসাড়তা বা ঝিঁ ঝিঁ ধরা:
পায়ে ঘনঘন ঝিঁ ঝিঁ ধরা বা অসাড় হয়ে যাওয়ার অনুভূতি ভিটামিন বি১২-এর অভাবের কারণে হতে পারে। এই সমস্যাটি স্নায়ুতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক এবং এটি ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
৬. ভেরিকোজ ভেইন (ফুলে ওঠা শিরা):
পায়ের শিরা স্পষ্টভাবে ফুলে ওঠা বা আঁকাবাঁকা হয়ে যাওয়াকে ভেরিকোজ ভেইন বলে। এটি উচ্চ রক্তচাপের একটি পরিচিত লক্ষণ। এছাড়া দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করার ফলে শিরার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়লেও রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়ে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
করণীয় ও পরামর্শ:
প্রতিদিনের জীবনে পায়ের এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো উপেক্ষা করা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। যেহেতু এই উপসর্গগুলোর পেছনে একাধিক রোগের সম্ভাবনা থাকে, তাই যেকোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রক্ত পরীক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব। মনে রাখবেন, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি সহজেই এড়ানো যায়।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস