ইরানের মুদ্রা থেকে চার শূন্য কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির আইনপ্রণেতারা। আর্থিক লেনদেনকে সহজ করতেই এই উদ্যোগ। আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
রোববার ইরানের পার্লামেন্টে দীর্ঘদিন আগের এই প্রস্তাবটি নতুন করে উত্থাপন করা হয়। মূল্যস্ফীতির ভারে জর্জরিত দেশটির মুদ্রার ধারাবাহিক অবমূল্যায়ন ও দরপতনের কারণে আর্থিক লেনদেন বেশ জটিল হয়ে পড়েছে।
ইরানের পার্লামেন্টের অর্থনৈতিক কমিশনের চেয়ারম্যান শামসেদ্দিন হোসেনির বরাত দিয়ে পার্লামেন্টের ওয়েবসাইট ইকানায় একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতি মতে, রোববার অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে ইরানের জাতীয় মুদ্রা হিসেবে নতুন রিয়াল প্রচলন করার প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। নতুন প্রক্রিয়া অনুযায়ী আগের ১০ হাজার রিয়াল নতুন ১ রিয়ালের সমান হবে। অর্থাৎ, রিয়ালের মূল্যমান থেকে চারটি শূন্য কমানো হচ্ছে। পাশাপাশি, নতুন রিয়ালকে ১০০ ঘেরানে বিভাজিত করা হবে।
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো এই প্রস্তাব আনা হলেও সে সময় এটি অনুমোদন পায়নি।
অর্থনৈতিক কমিশনের এই প্রস্তাব নিয়ে ইরানের পার্লামেন্টে ভোটের আয়োজন করা হবে। পার্লামেন্টের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের পর এটি গার্ডিয়ান কাউন্সিলে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে।
ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিলের দায়িত্ব হচ্ছে যেকোনো প্রস্তাবিত আইন নিরীক্ষা করে অনুমোদন দেওয়া বা বাতিল করা।এ বিষয়ে পার্লামেন্টের ভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা জানা যায়নি।
মে মাসে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মাদ রেজা ফারজিন জানান, তিনি এই পরিকল্পনা নিয়ে আগাবেন। তিনি উল্লেখ করেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ইরানের রিয়ালের 'ভাবমূর্তি ইতিবাচক নয়'।
এমন সময় এই উদ্যোগের কথা জানা গেলো, যখন ইরান বড় আকারের অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। দেশটি দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিক মূল্যস্ফীতি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের নেতিবাচক প্রভাবে জর্জরিত।
রোববার দিনের শেষে অনানুষ্ঠানিক মুদ্রাবাজারে এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানের বর্তমান রিয়ালের বিনিময় মূল্য ছিল নয় লাখ ২০ হাজার। স্থানীয় গণমাধ্যম ও অনানুষ্ঠানিক মুদ্রা বিনিময় হার নিরীক্ষক ওয়েবসাইট বনবাস্ট এই তথ্য জানিয়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরে ইরানীরা দৈনন্দিন লেনদেনে রিয়ালের বদলে তোমান ব্যবহার করে আসছে। ১০ রিয়ালে এক তোমান।
২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ওয়াশিংটনের ওই উদ্যোগের পর থেকেই ইরানের অর্থনীতিতে ভয়াবহ পর্যায়ের ধস নেমেছে।
জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরেই তেহরানের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করে 'সর্বোচ্চ চাপ' অব্যাহত রাখার নীতিতে গেছেন ট্রাম্প।
জুনে অনাস্থা ভোটে অর্থমন্ত্রী আবদোলনাসের হেম্মাতি বরখাস্ত হলে তার স্থলাভিষিক্ত হন আলি মাদানিজাদেহ।
সে মাসেই ইরানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ১২ দিনের বিধ্বংসী যুদ্ধে উভয় পক্ষই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। অনুবাদ: ডেইলি স্টার।