ফুসফুসের ক্যানসার— এটা এমন একটি রোগ, যা নিয়ে আমাদের অনেকেরই ধারণা ছিল শুধুমাত্র ধূমপায়ীদেরই এই রোগ হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। আজকের দিনেও অধূমপায়ীদেরও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে।
এই ক্যানসারের অন্যতম কারণ হলো বায়ু দূষণ, যা এখন এক নতুন ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, ফুসফুসের ক্যানসার সচেতনতা মাস উপলক্ষে চলুন জেনে নিই ৪টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যা বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে আপনার জীবনও -
১. ফুসফুস ক্যানসারের বড় কারণ
ফুসফুসের ক্যানসার শুনলেই আমাদের প্রথম মনে হয় ধূমপানের কথা, কিন্তু এখন ধূমপান না করেও ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, ২৫% ফুসফুসের ক্যানসার রোগীই কখনো ধূমপান করেননি। আর ভারতে এই সংখ্যা অনেক বেশি, প্রায় ৫০%। এর প্রধান কারণ হচ্ছে—বায়ু দূষণ। বিশেষ করে, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, কৃষির ধোঁয়া, জৈব জ্বালানি এসব অনেক বেশিই ক্ষতিকর। আর সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এর মধ্যে মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।
২. লক্ষণগুলো বুঝতে হবে, কারণ বেশিরভাগ সময় তা সাধারণ অসুখের মতো মনে হয়
ফুসফুসের ক্যানসারের প্রথম উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকে ধারাবাহিক কাশি, শরীর ক্লান্ত হওয়া, বা রুচি কমে যাওয়া—যা বেশিরভাগ সময়েই সাধারণ ঠান্ডা, সর্দি বা এলার্জির লক্ষণ মনে হয়। কিন্তু যদি এগুলোর কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত না করা হয়, তখন ফুসফুসের ক্যানসার দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরে চলে যেতে পারে। আর যেটা আসল বিপদ, তা হলো শুরুতেই শনাক্ত করলে রোগীর পাঁচ বছরের বেঁচে থাকার হার ৯০%। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক রোগীই হয়তো দেরিতে চিকিৎসা নেন, যার ফলে সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই, ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের এলডি সিটি স্ক্যান করানো উচিত।
৩. প্রতিটি ক্যানসার আলাদা—তাই চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা
ফুসফুসের ক্যানসার এক ধরনের রোগ নয়। এটি বিভিন্ন ধরনের হয়—যেমন নন-স্মল সেল লাং ক্যানসার (NSCLC) এবং স্মল সেল লাং ক্যান্সার (SCLC)। প্রথমটি প্রায় ৮০-৮৫% কেসে দেখা যায়। এই দুই ধরনের ক্যানসার একে অপর থেকে আলাদা এবং চিকিৎসায়ও ভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। একে অপরকে ঠিকভাবে চিহ্নিত করতে বায়োমার্কার টেস্টিং করা হয়, যা ক্যানসারের প্রকারভেদ নির্ধারণ করে এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করতে সাহায্য করে। আজকাল, চিকিৎসা বিশেষভাবে রোগীর বিশেষ ক্যানসার ধরনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়, যার ফলে চিকিৎসা আরও কার্যকর এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
৪. ইমিউনোথেরাপি: ক্যানসারের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত
আজকালকার চিকিৎসা পদ্ধতিতে ইমিউনোথেরাপি একটা বিপ্লব ঘটিয়েছে। এটি শরীরের নিজের ইমিউন সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দেয়, যাতে তা ক্যানসার কোষগুলোকে শনাক্ত করে ধ্বংস করতে পারে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো—কেমোথেরাপির তুলনায় এটি অনেক কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে, রোগী সুস্থ থাকতে পারে, এবং তার জীবনযাত্রার মানও আগের মতোই ভালো থাকে। বিশেষ করে ৬০ বছরের বেশি বয়সী রোগী যারা কেমোথেরাপি সহ্য করতে পারেন না, তাদের জন্য ইমিউনোথেরাপি এক নতুন আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা খুবই জরুরি। আজকের দিনে, শুধু ধূমপান নয় নয়, বায়ু দূষণ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, আর জিনগত কারণ—সবই এই রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তবে, সঠিক সময়ে শনাক্ত করা ও চিকিৎসা নেওয়া এখন অনেক সহজ। তাই ৫০ বছরের পর স্ক্রীনিং এবং সঠিক চিকিৎসা নিয়ে সচেতন হওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব। তাই সঠিক সময়ে সচেতন হোন, চিকিৎসা নিন—জীবনকে নিরাপদ রাখুন!