শিরোনাম
◈ ভিসা বাণিজ্য ও প্রতারণা: কেয়ার সেক্টর শীর্ষে, যুক্তরাজ্যে ওয়ার্কপারমিট ভিসা স্পন্সর বাতিল ১,৯৪৮ প্রতিষ্ঠানের ◈ সাংগঠনিক দুর্বলতায় ভরাডুবি, ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা! ◈ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন, সময় পেছানোর সুযোগ নেই, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা ব্যর্থ হবে: প্রেসসচিব ◈ বিশ্বের সবচেয়ে দামী মসলা *ভ্যানিলা বিন* উৎপাদন হচ্ছে বগুড়ায়! ◈ শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণা খাতে প্রণোদনা ভাতা আসছে: পে কমিশনের সুপারিশ ◈ তাহেরীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা ◈ নেপালে কারাগারে সেনাবাহিনীর গুলিতে দুই বন্দি নিহত ◈ টিকার সংকটে বাংলাদেশ, বিভিন্ন জেলায় শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি বিঘ্নিত  ◈ ফোন রেখে নামাজে যাওয়ার কারণে প্রাণে বেঁচে যায় হামাস নেতারা (ভিডিও) ◈ নির্বাচনের আগে উপদেষ্টা পরিষদে আসছে ‘রদবদল’, যুক্ত হচ্ছে নতুন মুখ

প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৩২ দুপুর
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

টিকার সংকটে বাংলাদেশ, বিভিন্ন জেলায় শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি বিঘ্নিত 

এল আর বাদল : বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় গত মাসখানেকের বেশী সময় ধরে শিশুদের ইপিআই টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। গত বছর থেকেই বাংলাদেশকে এই প্রথম ইপিআই টিকা কিনতে হচ্ছে। এর আগে এই টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হতো।

কয়েকটি জেলার সিভিল সার্জনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাসখানেক ধরে একেক জেলায় একেক টিকার সংকট চলছে। ------- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

অধিদপ্তর টিকা পাঠানোর পর এর মধ্যে কোনো কোনো জেলায় সংকট নেই। আবার কোথাও এখনও টিকা না পাওয়ায় টিকা দেওয়া যাচ্ছে না শিশুদের। যদিও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি প্রকল্পের ম্যানেজার এ এফ এম সাহাবুদ্দিনের দাবি, টিকার কোনো স্বল্পতা বা ঘাটতি নেই।

বাংলাদেশের টিকা আসার পর সবগুলো একসাথে বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে যতটুকু সময় লাগে সেই সময়টুকুই টিকা পেতে দেরি হয় বলেও দাবি করেন তিনি। ফলে এটাকে স্বল্পতা বলা যাবে না বলেউল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।

ইপিআই টিকার সংকট যেসব জেলায়

কয়েকটি জেলা থেকে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় যে টিকাগুলো দেওয়া হয়, কয়েকটি উপজেলায় সেগুলোর কিছুটা সংকট রয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা 'অন ক্যামেরা' সংকটের কথা স্বীকার করতে নারাজ।

যে জেলাগুলোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইপিআই টিকার ঘাটতির কথা শোনা যাচ্ছে, সেগুলো হলো মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, কুমিল্লা।

যদিও মুন্সিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এ টি এম ওবাইদুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে অর্থাৎ মাসখানেক আগে অল্প সময়ের জন্য দুই - একটা টিকার ঘাটতি থাকলেও এখন এই মুহূর্তে কোনো টিকার স্বল্পতা নেই।

এই কর্মসূচির আওতায় যেসব রুটিন টিকা দেওয়া হয় সেগুলো এখন এই জেলায় মজুদ রয়েছে বলে জানান তিনি।

এর মধ্যে, চাঁদপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. নূর আলম দীন অবশ্য পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিনের স্বল্পতা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। মাসখানেক ধরে এই টিকার স্বল্পতা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এই সংকটের সমাধান কবে হবে, সে বিষয়ে অধিদপ্তরই 'ভালো বলতে পারবে' বলে মন্তব্য করেন মি. দীন। তবে সংকট ঠিক হয়ে যাবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, " সাধারণত তিন – চার মাস পরপর আবার রিসাফল হয়তো, ঠিক হয়ে যায়।

এদিকে, ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুরের সিভিল সার্জন মামুনুর রহমান অবশ্য জানান, সংকট ছিল। তবে এই জেলায় যেই ভ্যাকসিনের স্বল্পতা ছিল, তা চলে আসায় সংকট সমাধান হয়েছে।

মি. রহমান বলেন, "গাজীপুরে সব চলে আসছে। আমরা এখান থেকে সরবরাহ করে দিচ্ছি অন্যান্য উপজেলাগুলোতে। হয়তো কেউ আজকে পেয়ে গেছে, কেউ হয়তো আগামীকাল পাবে। রিসেন্টলি আসছে।"

ইপিআই ভ্যাকসিনের আওতায় রয়েছে- এমন চারটি টিকা এই মুহূর্তে 'স্টক আউট' রয়েছে বলে জানিয়েছেন মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. খুরশীদ আলম। প্রায় এক মাস ধরে ওপিভি, পেন্টা, পিসিভি এবং আইপিভি ভ্যাকসিন এই জেলায় নেই বলে জানান তিনি।

তার দাবি, জেলা পর্যায়ে এগুলো না থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে কাজ চলছে। ভ্যাকসিন চেয়ে অধিদপ্তরে জোরালোভাবে চিঠি লেখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বছরে গড়ে প্রায় ৪০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া হয়

এই কর্মসূচির আওতায় যে সাতটি টিকা দেওয়া হয়, সেগুলোর সংকট বা ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন এই প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এ এফ এম সাহাবুদ্দিন।

তিনি জানান, এই কর্মসূচির আওতায় দেওয়া সাতটি ভ্যাকসিন অনেক সময় একসাথে দেশে আসে না। ফলে সবগুলো আসার পর একবারে জেলাগুলোয় এসব টিকা পাঠানো হয়।

তেলের খরচ ও ভ্যাকসিনের গাড়ি বারবার পাঠানোর অনুমতি নেই। ফলে সবগুলো টিকা একসাথে পাঠানোর কারণে কিছুটা দেরী হতে পারে বলে জানান মি. সাহাবুদ্দিন।

ফলে ভ্যাকসিনের স্বল্পতা বলা যায় না বলে দাবি করেন তিনি। প্রতি বছর সরকার একটি নির্দিষ্ট টার্গেট অনুযায়ী এই সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় টিকা দেয়।

কর্মকর্তা জানান, "প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে প্রায় ৪০ লাখ শিশুকে আমরা টিকা দিয়ে থাকি। এটার সাথে প্রতি বছর যদি গ্রোথ রেট বাড়ে তাহলে পরের বছর আরেকটু বেড়ে যায়। গতবছর ৩৯ লাখ, এবার ৪০ লাখ বাচ্চাকে দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর হয়তো আরেকটু বাড়বে।"

তবে একেক টিকার একেক ধরনের ডোজ থাকে, সেই হিসাবে এই গড় হার কম - বেশি হয় বলে জানান মি. সাহাবুদ্দিন।

ভ্যাকসিন কোথা থেকে আসে?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ডা. আবু হোসাইন মো. মইনুল আহসান জানান, সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচির আওতায় যেসব টিকা দেওয়া হয়, সেগুলোর কোনো সংকট নেই।

কমিউনিকেশন গ্যাপের কারণে স্বল্পতার বিষয় সামনে আসতে পারে এবং অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করলেই টিকাগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান মি. আহসান। এর আগে বাংলাদেশ বিনামূল্যে এই টিকা পেত কিন্তু এখন কিনে বিনামূল্যে দিতে হয় বলে জানান তিনি।

 আগে টিকাগুলা আমরা মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে ফ্রি অব কস্টে পেতাম। এখন কিন্তু আমাদের টিকাগুলা গভর্নমেন্টের ফান্ড দিয়ে আমরা কেনাকাটা করি। টিকাটা জনগণকে ফ্রি দিচ্ছি। কিন্তু নিজেরা কিনে দিচ্ছি। আগে ছিল ফ্রি পেতাম ফ্রি দিতাম " বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। তবে বাংলাদেশকে এখন টেন্ডারের মাধ্যমে এই ইপিআই কর্মসূচির টিকা কিনতে হয়।

আগেতো কিনতে হোতো না, সরাসরি চলে আসতো। এখন কেনার জন্য একটু ডিলে যেতে হয়। কিনতে হলে তো প্রসিডিউর ফলো করতে হয়। টেন্ডার করতে হয়, প্রকিউরমেন্ট আছে এগুলা ফলো করতে হয় " বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

" সাপ্লায়াররা সাপ্লাই দেয়, এজন্য একটু দেরি হচ্ছে যেটা আগে হোতো না। কিন্তু যদি কোনো জেলা বলে যে কোথায় নাই, জানালেই আমরা পাঠিয়ে দেই " বলেন মি. আহসান। বাংলাদেশ গতবছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল থেকে ইউনিসেফের মাধ্যমে এই টিকা ক্রয় করছে।

 টাকাটা আমরা ইউনিসেফকে দেই। আমরাই কিনি বাট মেইনলি ইউনিসেফের মাধ্যমে প্রকিউরমেন্টটা করা হয়। ওরাই কিনে দেয় আমাদেরকে। ওদের সার্টিফাইড টিকা এবং কোয়ালিটি ওরা কন্ট্রোল করে বলেন মি. আহসান।
তিনি আরো জানান, যখন যে দেশ থেকে এই টিকা সহজলভ্য(অ্যাভেইলেবল) হয়, তখন সে দেশ থেকেই কেনা হয়।

কোন কোন রোগের টিকা দেওয়া হয়, কেন?

একটি টিকা একটি নির্দিষ্ট রোগকেই প্রতিরোধ করে। যেমন – হামের টিকা একমাত্র এই রোগ থেকেই শিশুদের রক্ষা করে। টিকার মাধ্যমে রোগকে প্রতিরোধ করা যায়।

ইপিআই সহায়িকায় বলা হয়েছে, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি শুরু করার আগে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ শিশু ছয়টি রোগে মারা যেত।

১৯৭৯ সালের সাতই এপ্রিল বাংলাদেশে এক বছরের কম বয়সী সকল শিশুদের ছয়টি সংক্রামক রোগের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এই ইপিআই কার্যক্রম শুরু হয়।

নিয়মিত টিকা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের যক্ষা, ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, হাম ও ধনুষ্টংকারের মতো রোগে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

পরবর্তীতে ২০০৯ সাল থেকে আটটি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে সরকার। এরপরেও বিভিন্ন সময় রোগভেদে টিকার আওতা আরো বাড়ানো হয়েছে।

শূন্য মাস বয়স থেকে ৪৯ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু, কিশোরী ও সন্তান ধারণক্ষম মহিলাদের ক্ষেত্রে একেক ডোজের টিকা দেওয়া হয়।

শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার এবং শিশুর পঙ্গুত্বের হার কমানোই এই সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির উদ্দেশ্য বলে এর সহায়িকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

যক্ষা রোগ প্রতিরোধের জন্য বিসিজি টিকা, পোলিও-মাইলাইটিস রোগের জন্য ওপিভি, পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন দেওয়া হয় ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জাজনিত রোগসমূহের জন্য।

এছাড়া পিসিভি টিকা দেওয়া নিউমোক্কাল নিউমোনিয়া রোগ প্রতিরোধে, হাম ও রুবেলা রোগ প্রতিরোধে এমআর ভ্যাকসিন, হামের পৃথক টিকা এবং ধনুষ্টংকার রোগ প্রতিরোধে টিটি বা টিটেনাস টক্সয়েড টিকা দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়