শিরোনাম
◈ সরকারি চাকরির সংশোধিত অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ ◈ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রাতেই হাসপাতালে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ◈ এক লাখ ৪০ হাজার টন সার আমদানি করছে সরকার ◈ তিন শিক্ষার্থী ও দুই জন অভিভাবক এখনো নিখোঁজ, বলছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ◈ বাংলাদেশ ব্যাংকে শালীন ও পেশাদার পোশাকের নির্দেশনা, নারী-পুরুষ কর্মীদের জন্য স্পষ্ট বিধি ◈ আগামী বছরের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে: জামায়াত আমির (ভিডিও) ◈ যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি ◈ আই‌সি‌সির টি-‌টো‌য়ে‌ন্টি বো‌লিং র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশে মোস্তাফিজ ◈ ঢাকায় পি‌সি‌বির সভাপ‌তি, ভারত ও শ্রীলঙ্কা ছাড়াই বৃহস্প‌তিবার  শুরু হ‌চ্ছে এসিসির সভা ◈ মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২২ মরদেহ হস্তান্তর

প্রকাশিত : ২৩ জুলাই, ২০২৫, ০৭:৫১ বিকাল
আপডেট : ২৪ জুলাই, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আগুনে কত শতাংশ পুড়লে প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়?

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন। আগুনে পুড়ে দগ্ধ হওয়াদের চিকিৎসায় একজন মানুষের শরীরের কত শতাংশ পুড়েছে, সেটি যেমন তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে, তেমনি কখনো কখনো শরীরের তুলনামূলক কম অংশ দগ্ধ হলেও বা দগ্ধ না হলেও মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।

কারণ শুধু বাহ্যিক জ্বালাই নয়, কখনো কখনো ধোঁয়ার বিষক্রিয়া, শ্বাসনালীর পুড়ে যাওয়া মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

আগুনের সাথে মানুষের এই ভয়ঙ্কর লড়াইয়ে বেঁচে থাকার সাধারণ হিসেব যেমন আছে, তেমনি আছে অদৃশ্য ঝুঁকির হিসেবও।

কত শতাংশ পুড়েছে কিভাবে বোঝা যায়?
শরীরের কতটা অংশ দগ্ধ হয়েছে, তা নির্ধারণ করা দ্রুত চিকিৎসা শুরু ও রোগীর জীবনরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. শরমিন আক্তার সুমি বলেন, "কত শতাংশ পুড়েছে, তা ক্যালকুলেট করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হলো 'রুল অব নাইন' (Rule of Nine)। এই পদ্ধতিতে শরীরের বিভিন্ন অংশকে ৯% বা তার গুণিতক হিসেবে ভাগ করে মোট পুড়ে যাওয়া অংশের শতকরা হিসাব বের করা হয়।"

উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একটি হাত (বাহু থেকে আঙুল পর্যন্ত) ধরা হয় ৯%, পায়ের সামনের অংশ ৯% এবং পেছনের অংশ ৯%। এভাবে যোগ করলে শরীরের সম্পূর্ণ অংশ ১০০% হিসেবে ধরা হয়।
তবে তিনি জানান, দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হলে এই 'রুল অফ নাইন' এর হিসাব উপকারী হলেও আরও নিখুঁত ও নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায় 'লান্ড এন্ড ব্রাউডার' (Lund and Browder Chart) ব্যবহার করলে।

"বার্ন ইন্সটিটিউট বা বিশেষায়িত বার্ন সেন্টারগুলোতে আমরা এই চার্ট ফলো করি। এতে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুর জন্য আলাদা চিত্র দেওয়া থাকে। রোগীর শরীরের কোথায় কতখানি দগ্ধ হয়েছে, তা এই ছবিতে নির্দিষ্ট করে আঁকা হয় এবং পাশের ছক অনুসারে তার শতকরা হিসাব নির্ধারণ করা হয়," তিনি জানান।

এই চার্ট ব্যবহার করলে বয়সভেদে শরীরের বিভিন্ন অংশের গঠনে যেসব তারতম্য থাকে, সেগুলোও নির্ভুলভাবে বোঝা যায়।

যেমন, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পুরো মুখ পুড়লে সেটিকে ৪.৫% ধরা হয়, কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা তুলনামূলকভাবে বড় হওয়ায় মুখ ও মাথা পুড়লে সেই অংশ ৯% পর্যন্ত হতে পারে।

ডা. শরমিন আক্তার আরও বলেন, এছাড়াও 'রুল অব থাম্ব' (Rule of Thumb) নামে একটি পদ্ধতি আছে, যেখানে রোগীর হাতের তালুকে ১% ধরে পুড়ে যাওয়া অংশের আনুমানিক হিসাব করা হয়। যেসব পোড়ার অংশ 'ইরেগুলার শেপড' সেক্ষেত্রে এই নিয়ম ব্যবহার হয়। তবে সারা বিশ্বেই মূলত 'রুল অফ নাইন' ও 'লান্ড ব্রাউডার চার্ট'—এই দুটি পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

কত শতাংশ পুড়লে জীবনহানির শঙ্কা হয়?
দগ্ধতার মাত্রা ও এর পরিণতি নির্ভর করে শুধু শরীরের কত অংশ পুড়েছে তার ওপর নয়, রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা, বিদ্যমান রোগ এবং পোড়ার ধরন—সবকিছু মিলিয়ে নির্ধারিত হয় রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা।

ডা. শরমিন আক্তার সুমি জানান, কিছু বিষয়ে মোটা দাগে ধারণা দেওয়া গেলেও, সব ক্ষেত্রে একক রূপরেখা টানা যায় না।

তার ভাষায়, "যদি সবকিছু স্বাভাবিক থাকে, যেমন রোগী তরুণ ও আগে থেকে কোনো জটিলতা না থাকে, তাহলে ১৫% পর্যন্ত বার্ন সাধারণত নিরাময়যোগ্য ধরা হয়।''

''১৫% থেকে ৩০% বার্ন হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। এই সময়টা অত্যন্ত সংবেদনশীল। কিন্তু ৩০%-এর বেশি হলে পরিস্থিতি ক্রিটিক্যাল হয়ে ওঠে। ৩০% থেকে ৫০% বার্ন হওয়া রোগীদের বাঁচাতে যথেষ্ট প্রচেষ্টা, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও মনোযোগ লাগে," তিনি বলেন।

তিনি বলেন, "৫০% এর ওপরে বার্ন হলে সেটি 'ক্রিটিক্যাল' ক্যাটাগরিতে পড়ে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিসংখ্যান বলছে, ৭০-৭৫% এর বেশি বার্ন হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।"

তবে এগুলো মোটামুটি সাধারণ চিত্র হলেও কিছু ব্যতিক্রম সব সময়ই থাকে। অনেক সময় মাত্র ৫% বার্ন হলেও রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

ডা. শরমিন আক্তার বলেন, "খুব ছোট শিশু, প্রবীণ ব্যক্তি কিংবা আগে থেকে ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, প্রেগন্যান্সি বা কোমরবিড কন্ডিশনে আছেন, (কারো একাধিক জটিল রোগ যেমন ডায়াবেটিসের সাথে হাই ব্লাডপ্রেসার বা অন্য রোগ থাকলে) বাঁ অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা থাকলে সেই রোগীদের জন্য সামান্য বার্নও মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।"

তাই দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যক্তিভেদে তার শারীরিক অবস্থা, বয়স, পোড়ার ধরন এবং বিস্তৃতির ওপর। সব মিলিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু ও সঠিক পর্যবেক্ষণই পারে জীবন বাঁচাতে।

শরীর পোড়েনি কিন্তু মৃত্যু
শরীরের বড় অংশ না পুড়লেও বা অনেক কম পুড়লেও অনেক সময় রোগীর মৃত্যু হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, শুধু শতকরা হিসাব দেখে রোগীর সুস্থতার সম্ভাবনা নির্ধারণ করা সবসময় সম্ভব নয়।

ডা. সুমি জানান, "অনেক সময় দেখা যায় রোগীর বার্ন এপারেন্টলি কম হয়তো ৫% বা ১০% পুড়েছে, কিন্তু তার ইনহেলেশন বার্ন হয়েছে, অর্থাৎ শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এই ধরনের ইনহেলেশন বার্ন থেকে পরবর্তীতে 'অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম (ARDS)' হতে পারে।"

তিনি আরও বলেন, "এই জটিলতা থেকে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। তাই কখনও কখনও দেখা যায়, শরীরের তুলনামূলকভাবে কম অংশ দগ্ধ হলেও রোগীর জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়।"

বার্নের পরবর্তী অবস্থা নির্ভর করে অনেকগুলো ফ্যাক্টরের ওপর। তাই কখনই শুধু পার্সেন্টেজ অনুযায়ী বলা যায়না যে কেও ভালো থাকবে নাকি খারাপ থাকবে।

অনেক সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধারের পর দেখা যায়, শরীর পোড়েনি অথচ মৃত্যু হয়েছে বা পরবর্তীতে মারা যান।

এরকম ক্ষেত্রে আগুনের কারণে অক্সিজেন শেষ হয়ে গিয়ে কার্বন মনোক্সাইডের কারণে দম বন্ধ হয়ে অচেতন হয়ে যাওয়া বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

বিশেষ করে গত বছর ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের শরীরে আগুনে দগ্ধ হওয়ার লক্ষণ কম ছিল।

সেই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন বলেছিলেন, ''যারা মারা গেছেন, তারা কার্বন মনোক্সাইডের শিকার হয়েছেন। একটা বদ্ধ ঘরে যখন বের হতে পারেন না, তখন বিষাক্ত ধোঁয়াটা শ্বাসনালীতে চলে যায়।''

এ ধরনের ধোঁয়া শরীরের বিষ হয়ে প্রবেশ করে। অনেক সময় সেটি গলার ভেতরের নরম টিস্যু নষ্ট করে দেয়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়