সম্প্রতি চীনের হ্যাকারগোষ্ঠী 'সল্ট টাইফুন'-এর বিরুদ্ধে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর সাইবার হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলায় প্রায় সকল মার্কিন নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
ব্যাপক সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি
'সল্ট টাইফুন' শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে সাইবার হামলা চালিয়েছে। গত এক বছরের তদন্তে জানা গেছে, চুরি হওয়া তথ্যের মধ্যে রাজনীতিবিদদের ফোন রেকর্ড, সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য এবং বিভিন্ন দেশের সামরিক অবকাঠামো সম্পর্কিত গোপন ডেটা রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, হ্যাক হওয়া তথ্য ব্যবহার করে চীনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রাজনীতিবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও গুপ্তচরদের টার্গেট করতে পারে।
সাবেক এফবিআই কর্মকর্তাদের মতে, এই হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের পাওয়ার গ্রিড, টেলিকম কোম্পানি এবং এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায়ও প্রবেশ করেছে।
বেইজিংয়ের কৌশল ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমা গোয়েন্দাদের মতে, 'সল্ট টাইফুন' শুধু তথ্য চুরি করেনি, বরং পশ্চিমা নেটওয়ার্কগুলোর ভেতরে দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা বলছেন, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা, রাজনীতি এবং বেসরকারি খাত সবই এখন চীনের লক্ষ্যবস্তু। যদিও সরাসরি জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ মেলেনি, পশ্চিমা তদন্তকারীদের ধারণা, চীনের তিনটি প্রযুক্তি কোম্পানি এবং সামরিক ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এই হামলার পেছনে রয়েছে।
এই সাইবার হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, কানাডা, ইতালি ও স্পেন যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ করেছে, যার প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (Royal United Services Institute) জানিয়েছে, এই হামলা কেবল তথ্য চুরির উদ্দেশ্যে করা হয়নি, বরং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন নেটওয়ার্কে স্থায়ীভাবে ঢুকে পড়া হ্যাকারদের মূল লক্ষ্য ছিল। এটি দেখিয়ে দিয়েছে যে পশ্চিমারা এখন আর অজেয় নয়। ডিজিটাল যুদ্ধক্ষেত্রে চীনের এই ক্রমবর্ধমান আধিপত্য আগামীতে আমেরিকা এবং তার মিত্রদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।