বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি পূর্ণাঙ্গ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) চেয়েছেন ন্যাটোর অস্ট্রিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান গুনথার ফেলিংগার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (পুরোনো টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি ভারতের প্রতি ন্যূনতম আগ্রহও ইউরোপের থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন।
নিজের পোস্টে গুনথার লিখেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুরোপুরি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা গেলে দুই পক্ষই লাভবান হবে। তার মতে, বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতি এবং ইউরোপের নতুন শিল্প ও বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে। এ সময় তিনি ভারতকে সরাসরি লক্ষ্য করে বলেন, আমাদের ভারতের আর প্রয়োজন নেই। বরং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়াই ইউরোপের ভবিষ্যৎ স্বার্থের পক্ষে।
তিনি তার পোস্টে ভারতকে ‘সাবেক ভারত’ (Former India) করার দাবি জানিয়ে কঠোর অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে ভারতকে সাবেক ভারত বানাতে হবে।
এর আগেও, গুনথার ফেলিংগার ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যকে বিভক্ত করে আলাদা আলাদা নাম ও পতাকা সংযুক্ত করে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছিলেন। ওই মানচিত্রে ভারতকে একক রাষ্ট্র হিসেবে নয়, বরং অনেকগুলো পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত দেখানো হয়। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। ভারত বিষয়টিকে সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, গুনথার ফেলিংগার ন্যাটোতে একটি প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন। ফলে তার এমন মন্তব্য নিছক ব্যক্তিগত মত নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির দিকে ইউরোপের একটি অংশের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন হতে পারে।
এমন সময়ে এই বক্তব্য এল, যখন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক নানা কারণে টানাপোড়েনে রয়েছে। বাণিজ্য, কূটনীতি ও সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও দুই দেশের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এর প্রেক্ষাপটে ফেলিংগারের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তির ভারতবিরোধী অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
এদিকে, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তৈরি পোশাক খাত, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও শ্রম অধিকার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতা বাড়ছে। ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে, এবং বেশ কিছু দেশ এখন বাংলাদেশকে কৌশলগত বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে।
ফেলিংগারের পোস্টটি প্রকাশের পর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। অনেকে একে ভারতের প্রতি এক ধরনের রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব নতুনভাবে মূল্যায়নের সময় এসেছে।