শিরোনাম
◈ দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু: ট্রাভেল পাসের আবেদন তারেক রহমানের ◈ হাসিনার অনুসারীদের জামিন বিতর্কে আইন উপদেষ্টার উদ্বেগ প্রকাশ ◈ প্রার্থীদের অস্ত্রের ঝুঁকি, নিরপেক্ষ প্রশাসন নিয়ে চ্যালেঞ্জ ইসির ◈ কূটনীতির রীতিনীতি কি উপেক্ষা করছেন প্রণয় ভার্মা ◈ ওসমান হাদির অস্ত্রোপচার হবে সিঙ্গাপুরে, অনুমতি দিয়েছে পরিবার ◈ দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করলো সরকার ◈ দুর্বল প্রতিপ‌ক্ষের বিরু‌দ্ধে  লড়াই ক‌রে জিত‌লো ‌রিয়াল মা‌দ্রিদ ◈ মেয়েকে নিয়ে ২৫ তারিখ সকাল ১১টায় ঢাকায় নামবেন তারেক রহমান ◈ নির্বাচন নিয়ে ভারতের 'নসিহতে' বাংলাদেশের তীব্র প্রতিক্রিয়া কেন? ◈ শেষ স্ট্যাটাসে ওসমান হাদিকে নিয়ে যা লিখেছিলেন এনসিপির নেত্রী রুমী

প্রকাশিত : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:১৪ দুপুর
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৮:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রমজান সামনে, বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম: ভোক্তা অধিদপ্তরে ম্যাজিস্ট্রেট সংকট

সহযোগীদের খবর: হঠাৎ করে দেশের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দর। ভরা মৌসুমেও ক্রেতার নাগালের বাইরে শীতকালীন সবজির দাম। আসছে রমজান। প্রতি বছর রমজান মাসকে সামনে রেখে দাম বাড়ে নিত্যপণ্যের। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে যে সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন তা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংস্থার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বিশাল মেট্রোপলিটন শহরের পাশাপাশি সারা দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখা যাচ্ছে না ম্যাজিস্ট্রেটস্বল্পতার কারণে। সূত্র: বণিক বার্তা প্রতিবেদন

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সংস্থাটির ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। তারা প্রতিদিন সকালে একেক এলাকায় অভিযানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন, বিকালে অভিযান শেষে অফিসে এসে রিপোর্ট করেন। সংস্থাসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ঢাকা মহানগরীর মতো বিশাল এলাকায় লাখ লাখ দোকান, হাজার হাজার বাজার, কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব তদারকির জন্য ম্যাজিস্ট্রেট সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় ভোক্তা অধিকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ভোক্তা অধিকারের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আমরা প্রচণ্ড কাজের প্রেশারে থাকি। প্রতিদিন ফিল্ডে যেতে হয়। জরুরি প্রয়োজনেও অনেক সময় ছুটি নেয়ার সুযোগ হয় না।’

ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটিসহ পাশের সাভার, কেরানীগঞ্জ এলাকায়ও আমাদের অভিযান চালাতে হয়। এসব এলাকায় এত পরিমাণ দোকান, বাজার, কারখানা, ভুয়া প্রতিষ্ঠান, ভেজাল খাদ্যের কারখানা যে মাত্র ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে কোনোভাবেই এটা কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়।’

ওই কর্মকর্তাদের ভাষ্যে, ঢাকার কোনো এলাকায় যদি একবার ভোক্তার কর্মকর্তারা অভিযানে যান, অন্তত তিন থেকে পাঁচ বছর লাগবে আবার ওই এলাকায় রুটিনমাফিক অভিযানে আসতে। বর্তমানে তারা গুরুত্ব বিবেচনা করে এলাকা ভাগ করে অভিযান পরিচালনা করছেন। এক্ষেত্রেও এক এলাকায় একবার গেলে পরবর্তী সময়ে ওই এলাকায় আবার অভিযানে আসতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।

ভোক্তার ম্যাজিস্ট্রেটরা বলছেন, ‘ঢাকায় যে পরিমাণে ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, যে পরিমাণে সিন্ডকেট হয়, এক কারওয়ান বাজার বা মোহাম্মদপুর এলাকায়ই ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন। সেখানে পুরো ঢাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা মাত্র ছয়জন।’

দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সিংহভাগই পরিচালিত হয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায়। কিন্তু এ দুই বড় শহরে স্বল্প ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা স্বার্থসংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বারবার মেট্রোপলিটন সিটিসহ বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানোর বিষয়ে বলা হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় লাখ লাখ দোকান, কারখানা, প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে কাজ করছেন মাত্র ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট। অন্যদিকে চট্টগ্রামের মতো বিশাল বাণিজ্যিক নগরীতে মাত্র একজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে রেখেছে সরকার। এটা প্রমাণ করে সরকার ভোক্তা অধিকারের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। আগের সরকার তো আন্তরিক ছিলই না, অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিক হবে এ প্রত্যাশা ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা দেখেছি, নতুন বন্দোবস্তেও ভোক্তা অধিকার সবচেয়ে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে।’

এসএম নাজের হোসাইন আরো বলেন, ‘‌সরকার মনে করে ভোক্তা অধিকারের ম্যাজিস্ট্রেট বা কার্যপরিধি কিংবা ক্ষমতা বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীরা রুষ্ট হবেন। কিন্তু এটা ভ্রান্ত ধারণা। দেশের ১৮ কোটি জনগণের সবাই কোনো না কোনোভাবে ভোক্তা। যিনি নিজে কাপড় বিক্রেতা, তিনি কিন্তু অন্য দোকানে গিয়ে মাছ কেনেন, মাংস কেনেন, মোবাইল ফোন কেনেন। অর্থাৎ ব্যবসায়ী হলেও তিনি ভোক্তা। ভোক্তা অধিকার তারও প্রয়োজন। আমি মনে করি, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ানো উচিত।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোক্তা অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের বিষয়টি শুধু ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে নয়, বরং সারা দেশেই রয়েছে। বর্তমানে ১৫টি জেলায় ভোক্তার কোনো ম্যাজিস্ট্রেট নেই। চট্টগ্রাম মহানগরীরতে একজন আর চট্টগ্রামের বিভাগীয় কার্যালয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। আবার জেলা কার্যালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট খাগড়াছড়ি জেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। একদিকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নেই, অন্যদিকে নিজ জেলার পাশাপাশি অন্য জেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন ভোক্তা স্বার্থসংশ্লিষ্টরা।

ভোক্তা অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের বিভাগীয় উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগের দুজন কর্মকর্তা ভোক্তা আইনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে একজন চট্টগ্রাম জেলার দায়িত্ব পালন করছেন।’ চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা বাড়ানো হলে ভোক্তা অধিকারসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা আরো বেগবান হবে বলে মনে করেন তিনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘‌আমরা বিভিন্ন সময় আমাদের সভাগুলোতে এবং অভ্যন্তরীণ আলোচনায় দেখেছি, ঢাকা মহানগরীর মতো বিশাল এলাকার জন্য আমাদের অন্তত ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন ছয়জন। এত অল্পসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, সাভার, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকা কভার করতে পারেন না। অন্তত ১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট হলে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম কোনো রকম চালিয়ে নেয়া যেত।’

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘‌চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্তমানে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। অন্তত ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে পুরো মহানগরী কাভার করা সম্ভব হতো। আমাদের অর্গানোগ্রামে ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানোর সুযোগ এখন নেই। কিন্তু যেভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ হচ্ছে এবং ভোক্তাদের প্রতারিত হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে, সে হিসেবে সরকারের এ বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করি।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়