শিরোনাম
◈ দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু: ট্রাভেল পাসের আবেদন তারেক রহমানের ◈ হাসিনার অনুসারীদের জামিন বিতর্কে আইন উপদেষ্টার উদ্বেগ প্রকাশ ◈ প্রার্থীদের অস্ত্রের ঝুঁকি, নিরপেক্ষ প্রশাসন নিয়ে চ্যালেঞ্জ ইসির ◈ কূটনীতির রীতিনীতি কি উপেক্ষা করছেন প্রণয় ভার্মা ◈ ওসমান হাদির অস্ত্রোপচার হবে সিঙ্গাপুরে, অনুমতি দিয়েছে পরিবার ◈ দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করলো সরকার ◈ দুর্বল প্রতিপ‌ক্ষের বিরু‌দ্ধে  লড়াই ক‌রে জিত‌লো ‌রিয়াল মা‌দ্রিদ ◈ মেয়েকে নিয়ে ২৫ তারিখ সকাল ১১টায় ঢাকায় নামবেন তারেক রহমান ◈ নির্বাচন নিয়ে ভারতের 'নসিহতে' বাংলাদেশের তীব্র প্রতিক্রিয়া কেন? ◈ শেষ স্ট্যাটাসে ওসমান হাদিকে নিয়ে যা লিখেছিলেন এনসিপির নেত্রী রুমী

প্রকাশিত : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:২৬ বিকাল
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৮:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

প্রার্থীদের অস্ত্রের ঝুঁকি, নিরপেক্ষ প্রশাসন নিয়ে চ্যালেঞ্জ ইসির

মহসিন কবির: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্রপ্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমা এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

তবে রাজনৈতিকভাবে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স এবং গানম্যান নিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থীদের অস্ত্রের লাইসেন্স দিতে নীতিমালাও জারি করা হয়েছে।

এদিকে নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনী উত্তাপ বেড়েছে। ভোটের মাঠে- নির্বাচনী প্রশাসন কতটা দলনিরপেক্ষ থাকতে পারবে এটা চিন্তিত ইসি। 

বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যে বিতর্ক, অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে, তার মূল কেন্দ্রে ছিল মাঠপ্রশাসনের ভূমিকা। দলীয় আনুগত্য ও প্রভাবের অভিযোগে অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, ক্ষুণ্ন হয়েছে ভোটের বিশ্বাসযোগ্যতা। সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই এবার একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকায় প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে সাধারণ ভোটার ও বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে বাস্তবতায় সেই প্রত্যাশা পূরণ করা সহজ নয়। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক পদায়ন ও রদবদল ঘিরে এরই মধ্যে নানা অভিযোগ ও বিতর্ক সামনে এসেছে। সদ্য পদায়নকৃত অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কখনও বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ, কখনও বড় বড় রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে প্রভাবিত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রশাসন দলনিরপেক্ষ রাখার দায় যেমন সরকারের, তেমনি নির্বাচনকালীন মাঠ প্রশাসনকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থায় পড়েছে ইসি।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আসনভিত্তিক মনোয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়েছে, যা আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। একটি সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের জন্য প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসন্ন নির্বাচন যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত হবে। তাই দলনিরপেক্ষ প্রশাসন বজায় থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে বিগত তিনটি নির্বাচনে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের এবার ভোটের দায়িত্বে রাখা যাবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা হাসপাতালসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভোটের দায়িত্বে না রাখা।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, গত তিনটি নির্বাচনে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের নিয়ে সবাই তো সন্দেহ পোষণ করেন। তবে ভালো-খারাপ তো সবখানেই আছে। অনেকে একদম বলেছেন, গত তিন নির্বাচনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা যেন ধারে-কাছে না আসতে পারেন। এখন ১০ লাখ লোকের (যারা ভোটের দায়িত্বে থাকেন সাধারণত) মধ্য থেকে বাদ দিতে গেলে কম্বলই উজাড় হয়ে যাবে। লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড়- আমার অবস্থা হয়েছে সে রকম।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন বিশ্লেষক এবং অন্য কমিশনারগণ একাধিকবার বলেছেন- শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা ইসি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে পারবে না। নির্বাচন কতটা ভালো হবে, তা নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা এবং নির্বাচনী প্রশাসনের ওপর। যদি মাঠ প্রশাসনের কেউ বিশেষ কোনো দলের প্রতি অনুগত হয়ে যান, তখন ভোটের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ না থাকলেও মাঠ কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে পুরো নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলেও মনে করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম গণমাধমকে বলেছেন, একা ইসির পক্ষে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব না। রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকতে হবে। দলগুলো যদি সরকার বা প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার না করে, তাহলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। বিগত তিনটি নির্বাচনে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বর্তমান পরিণতি দেখে এবার হয়তো অনেকেই শিক্ষা নেবেন। এ ক্ষেত্রে ইসির গাইড লাইনও দরকার।

আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে তফসিল ঘোষণার আগে দুই দফা জেলা প্রশাসন, ইউএনওসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের রদবদল করেছে সরকার। গত ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রশাসনে যে কোনো পর্যায়ের রদবদলে ইসির অনুমতি প্রয়োজন হবে। এরই মধ্যে যাঁদের পদায়ন করা হয়েছে, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেই বিশেষ দলের আনুগত্যের অভিযোগ উঠেছে। কারও কারও বিরুদ্ধে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে নাম এসেছে। তাই অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আরও একদফা রদবদল করতে পারে ইসি। এরই মধ্যে যেসব কর্মকর্তা বড় দলগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের প্রত্যাহারের নির্দেশ আসতে পারে ইসি থেকে।

নিরপেক্ষ নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে ইসির উদ্যোগ : নানা বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে আসন্ন নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার হিসেবে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বাদ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বিগত তিনটি নির্বাচনে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের ভোটের কোনো পর্যায়ে দায়িত্বে রাখা হচ্ছে না। এবার দায়িত্বে থাকবে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এদিকে গত সোমবার রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। সেই তালিকায় উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রয়েছেন। বলা হয়েছে- যোগাযোগের সুবিধার্থে তথ্যে চাওয়া। বাস্তবে দায়িত্বরতদের মনিটর করবে ইসি। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠলে বদলি বা প্রত্যাহার করার সুপারিশ করবে।

নিরপেক্ষ মাঠ প্রশাসন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক অতিরিক্তি সচিব ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই সরকার কোনো দলীয় সরকার না। কাজেই মাঠ প্রশাসন দল নিরপেক্ষ হবে, সেটাই প্রত্যাশা রাখি। তবে এটাও ঠিক ১০ লাখের মতো লোক ভোটের দায়িত্বে থাকবে শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে সেটাও আশা করা ঠিক না। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন, অতীতে যাঁরা করেছেন, তাঁদের পরিণতি দেখে সেই সাহস করবে কেউ না। সবচেয়ে বড় কথা, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ইসি যদি তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করে, তাহলে অন্যরা সতর্ক হবে, বিতর্কিত কাজে আর জড়াবে না।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ ভোটাররা মনে করেন, এবার যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে না, তাই নির্বাচনী প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকাই পালন করবে। অবশ্য সেটা নির্ভর করছে ইসির শক্ত অবস্থানের ওপর। ইসির সিদ্ধান্ত যদি কোনো দলের দিকে ঝুঁকে যায়, তার প্রভাব মাঠ প্রশাসনেও পড়বে- সেই শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়