আধুনিক জীবনে স্মার্টফোন এখন মানুষের নিত্যসঙ্গী। যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, ফোন হাতছাড়া হয় না। এমনকি টয়লেটেও অনেকেই ফোন নিয়ে যান। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই অভ্যাস মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। গবেষণায় উঠে এসেছে, টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে অর্শ বা পাইলস হওয়ার ঝুঁকি ৪৬ শতাংশ বেশি, যা একদিকে অত্যন্ত সাধারণ হলেও বেশ কষ্টদায়ক একটি রোগ।
অর্শ বা পাইলস কী
বিশেষজ্ঞদের মতে, মলদ্বারের নিচের অংশে শিরা ফুলে ওঠা এবং প্রদাহ সৃষ্টি হওয়াকেই অর্শ বা পাইলস বলা হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি মানুষের শরীরে রক্তনালীর কুশন বা হেমোরয়েড থাকে, যা মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিন্তু যখন এগুলো অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে, তখন ব্যথা, চুলকানি, অস্বস্তি এবং মাঝে মাঝে রক্তপাতের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন।
কেন হয় এই সমস্যা
অতিরিক্ত চাপ নিয়ে মলত্যাগ করা, দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা, কোষ্ঠকাঠিন্য, গর্ভাবস্থা বা খাবারে পর্যাপ্ত আঁশ না থাকা—এসব কারণেই অর্শের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৬৬ শতাংশ মানুষ টয়লেটে বসে ফোন ব্যবহার করেন। এর মধ্যে যারা ফোন ব্যবহার করেছেন, তাদের মধ্যে অর্শ হওয়ার ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক বেশি।
ফলাফল বলছে, ফোন ব্যবহারকারীরা টয়লেটে সময়ও বেশি কাটান। প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ টয়লেটে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় থাকেন, যেখানে ফোন ব্যবহার না করা ব্যক্তিদের মধ্যে এ হার মাত্র ৭ শতাংশ। দীর্ঘ সময় টয়লেটে বসে থাকা মলদ্বারের রক্তনালীগুলিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা অর্শের ঝুঁকি বাড়ায়।
কীভাবে চাপ সৃষ্টি হয়
চেয়ার বা সোফায় বসলে শরীর স্বাভাবিকভাবে সাপোর্ট পায়। কিন্তু টয়লেট সিটে সেই সাপোর্ট না থাকায় মলদ্বারের রক্তনালীগুলো সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষত ফোনে ডুবে থাকার কারণে মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় ধরে টয়লেটে বসে থাকেন, ফলে রক্তনালীগুলিতে চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং অর্শের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. তৃষা পাসরিচা বলেছেন, ফোনের নকশাই এমনভাবে তৈরি যে তা ব্যবহারকারীদের ক্রমাগত ব্যস্ত রাখে। এর ফলে মানুষ টয়লেটে অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘ সময় কাটাচ্ছেন। তার পরামর্শ, টয়লেটে কখনো ফোন নিয়ে না যাওয়া এবং মলত্যাগের সময় সংক্ষিপ্ত রাখা।
করণীয় কী
চিকিৎসকদের মতে, এই অভ্যাস পরিবর্তন করলে সহজেই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
প্রথমত, ফোনকে একেবারেই টয়লেটের বাইরে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, টয়লেটে যতটুকু দরকার ততক্ষণই থাকা উচিত।
তৃতীয়ত, পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত, যাতে মল নরম থাকে।
চতুর্থত, আঁশযুক্ত ফল ও শাকসবজি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা স্বাভাবিক মলত্যাগে সাহায্য করে।
সবশেষে, সঠিক ভঙ্গিতে বসাও জরুরি। টয়লেটে বসার সময় পায়ের নিচে ছোট একটি স্টুল রাখলে হাঁটু কোমরের উপরে উঠে যায়, যা মলদ্বারের চাপ কমায়।
প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করছে ঠিকই, তবে অসতর্ক ব্যবহারে তা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। টয়লেটে ফোন ব্যবহারের মতো সামান্য অভ্যাসও অর্শের মতো কষ্টদায়ক রোগ ডেকে আনতে পারে। তাই সচেতনতা এবং সামান্য জীবনযাত্রার পরিবর্তনই আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে এই অস্বস্তিকর সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে। উৎস: টাইমস অব ইন্ডিয়া।