শাহীন খন্দকার: [১] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে প্রকাশ, রাজধানী ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমান অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। আর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বাড়ছে মানদন্ডের চেয়েও বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে গত ১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চালানো প্রাক-বর্ষা জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (২৮ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত মৌসুম পূর্ব এডিস সার্ভে ২০২৪ এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এতথ্য উপস্থাপন করা হয়।

[৩] অনুষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনবক্স’নামে পরিচিত। স্বীকৃত এই মানদন্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশ বেশি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করা হয়।  রাজধানীর দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

[৪] রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো ১২, ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭, ৩৩নং ওয়ার্ড। আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো ৪, ১৩, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭, ২৩ নং ওয়ার্ড। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ১২নং ওয়ার্ড।

[৫] এই ওয়ার্ডে এডিসের ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে ১৩ নং ও ২০ নং ওয়ার্ড, এগুলোতে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০ শতাংশ। ৩৬ নং ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৩১নং ও ৩২নং ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৭ নং ও ৩৩ নং ওয়ার্ডে ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।

[৬] এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ঢাকার সবচেয়ে বেশি ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৪ নং ওয়ার্ডে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৫২ নং ও ৫৪ নং ওয়ার্ডে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১৬ নং ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ৩নং, ৫নং, ১৫নং, ১৭নং এবং ২৩নং ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রতিবছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মৌসুম পূর্ব, মৌসুম, মৌসুম পরবর্তী তিনটি জরিপ পরিচালনা সম্পন্ন। তারই অংশ হিসেবে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কীটতত্ত্ববিদদের ২১টি টিমের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

[৭] জরিপ পদ্ধতি সর্ম্পকে যা বললেন: উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯৯টি ওয়ার্ডে ২১টি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়। প্রতি ওয়ার্ড ৮টি ব্লকে ভাগ করে দুটি টিম ৪টি ব্লকে ১৫টি করে প্রতি ওয়ার্ডে ৩০টি বাড়িতে জরিপ পরিচালনা করেন। ১০ দিনে ৯৯টি ওয়ার্ডে সর্বমোট ৩১৫২টি বাড়িতে সার্ভে করা হয়। তাছাড়া যেসব ওয়ার্ডে বাড়ির সংখ্যা বেশি ও এলাকা বড় সেগুলোতে ৩-৫টি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়। 

[৮] এক নজরে সংক্ষিপ্ত ফলাফল: জরিপ করা ৩ হাজার ১৫২ বাড়ির মধ্যে ৪৬৩ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও পিউপা পাওয়া গেছে। তার মধ্যে বহুতল ভবন ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, স্বতন্ত্র বাড়ি ২১ দশমিক ৬ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবন ২১ দশমিক ৬ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়ি ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও খালি জায়গা ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

[৯] এদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও হাউস ইনডেক্স ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। দক্ষিণ সিটিতে মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও হাউস ইনডেক্স ১৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সম্পাদনা: রাশিদ 

এসআই/আর/এইচএ