বাংলাদেশ থেকে ভারতে কাঁচা পাট রপ্তানিতে একতরফা নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতীয় পাট শিল্পে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। কাঁচামালের সংকটে ভারতের স্থানীয় বাজারে পাটের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে ভারতীয় জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইজেএমএ)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশে পাট বীজ রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ করার জন্য ভারত সরকারের কাছে জোরালো আর্জি জানিয়েছে সংগঠনটি। এই খবর দিয়েছে দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন।
গত জুলাই মাসে ভারতে প্রতি টন কাঁচা পাটের দাম ছিল প্রায় ৬০,০০০ টাকা। বর্তমানে সেই দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১০,০০০ টাকায়। শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ হঠাৎ করে কাঁচা পাট রপ্তানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই দেশটির স্থানীয় বাজারে এই অস্থিরতা শুরু হয়েছে।
আইজেএমএ চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্ত ভারতের বস্ত্রমন্ত্রী গিরিরাজ সিংকে লেখা এক চিঠিতে (১৮ ডিসেম্বর) জানিয়েছেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে বাংলাদেশ একতরফাভাবে কাঁচা পাট রপ্তানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে ভারতে কাঁচামালের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং পাট মিলগুলো বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, "এই পরিস্থিতি মিলগুলোর কার্যক্রম, কর্মসংস্থান এবং পুরো পাট শিল্পের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।"
ভারতীয় পাট মিল সমিতি যুক্তি দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ তাদের পাট উৎপাদনের জন্য ভারতের উচ্চ ফলনশীল (এইচওয়াইভি) বীজের ওপর প্রায় পুরোটাই নির্ভরশীল। অথচ ভারতীয় বীজ ব্যবহার করে উৎপাদিত কাঁচা পাট তারা ভারতে রপ্তানি করছে না।
রাঘবেন্দ্র গুপ্ত তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, "এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, বাংলাদেশ তাদের পাট উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য ভারতের বীজের ওপর নির্ভর করছে, অথচ ভারতীয় মিলগুলোকে কাঁচা পাট পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে। এতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে স্পষ্ট বৈষম্য তৈরি হয়েছে।"
শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, ভারতীয় বীজ দিয়ে উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশ কম দামে ভারতে রপ্তানি করছে, যা ভারতের স্থানীয় উৎপাদনকারীদের দুর্বল করে দিচ্ছে। তাই কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা এবং বাণিজ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ভারত থেকে বাংলাদেশে সব ধরনের পাট বীজ, বিশেষ করে উচ্চ ফলনশীল বীজ রপ্তানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।
সংগঠনটির মতে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সমতা ফেরাতে এবং ভারতীয় কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশে পাট বীজ রপ্তানি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। তাদের দাবি, পাটজাত পণ্য আমদানিও কেবল জুট কমিশনারের লাইসেন্সের মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কাজারিয়া বিজনেসলাইনকে বলেন, "যেহেতু বাংলাদেশ ভারতে কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে, তাই আমাদের কৃষকদের বাঁচাতে ভারতেরও উচিত পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিবেশী দেশটিতে বীজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া।"
উল্লেখ্য, ভারত সরকার এর আগে গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)-এর নির্দেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে পাটের কাপড়, দড়ি এবং বস্তার মতো পণ্যগুলো স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। বর্তমানে শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রের নাভা শেবা সমুদ্রবন্দর দিয়েই এই পণ্যগুলো আমদানির অনুমতি রয়েছে।
সূত্র: ইনকিলাব