ট্রানজিট চুক্তি ও প্রটোকল স্বাক্ষরের ২ বছর ৮ মাস পর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে আনা পণ্যের একটি চালান সড়কপথে ভুটানের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে কাস্টমসের সব প্রক্রিয়া শেষে পণ্যভর্তি কনটেইনার নিয়ে একটি লরি চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে গেছে।
ট্রায়াল রান হিসেবেই ট্রানজিটের আওতায় ভুটান এ পণ্য নিয়ে গেল। চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে পণ্যের এই চালান পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে প্রবেশ করবে। এরপর ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে ৬৮৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছবে ভুটানে।
থাইল্যান্ড থেকে আসা এই চালানে রয়েছে ৬ হাজার ৫৩০ কেজি শ্যাম্পু, চকলেট, জুস, পাম ফলসহ বিভিন্ন পণ্য। এই চালান খালাসে বাংলাদেশ বিভিন্ন চার্জ ও মাশুল হিসেবে আয় করেছে ১ লাখ ১ হাজার ৭১৩ টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক ভুটানে পণ্য চালান পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ট্রায়াল রানে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোন সমস্যা থাকলে তা চিহ্নিত করা হবে। দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা থাকলে তা সমাধান করা হবে। এরপর ভুটান চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে নিয়মিত পণ্য পরিবহণ করবে। এতে দুই দেশই লাভবান হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ভুটান স্থলবেষ্টিত একটি দেশ। এই দেশে কোনো সমুদ্র বা নদীবন্দর নেই। তাই তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে হয় দেশটিকে। এতদিন ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের ওপর দেশটিকে নির্ভর করতে হতো। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গে ২০২৩ সালের ২২ মার্চ ট্রানজিট চুক্তি ও প্রটোকল সই করে। গত বছরের এপ্রিলে ভুটানে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে উভয়পক্ষ সম্মত হয় যে, পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে দুটি ট্রায়াল রান সম্পন্ন হওয়ার পর চুক্তিটি কার্যকর হবে। এর আওতায় দুই মাস আগেই প্রথম চালান হিসেবে থাইল্যান্ড থেকে পণ্য চালান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে।
সম্প্রতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মূলত এরপরই ট্রায়াল রান গতি পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্য খালাস শেষে ভুটানে পাঠানো হয় বুধবার রাতে।
বন্দর সূত্র আরও জানায়, থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত চালানটি গত ২৪ সেপ্টেম্বর এমভি এইচআর হিরা নামের জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার পর বুধবার বিকালে চালানটি খালাস শুরু হয়।
জানা গেছে, হিমালয়কন্যা হিসেবে পরিচিত ভুটান স্বাধীন রাষ্ট্র। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কোনো দেশের ওপর একক নির্ভরতা কমানোর জন্য দেশটি চট্টগ্রাম বন্দরকে বেছে নেয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে তাদের খরচ যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি বাংলাদেশও এই খাতে অর্থ আয় করবে। মূলত সেই সুযোগটি লুফে নিয়েই দুই দেশ চুক্তি ও প্রটোকল সই করে। যার সুফল পাওয়া শুরু হলো ট্রায়াল রানের মাধ্যমে।
সূত্র: যুগান্তর