ফারুকুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ: [২] কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের পুমদী ইউনিয়নের নারায়ণ ডহর গ্রামের এখলাস উদ্দিন সবুজ। রাজধানী ঢাকার কবি নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। পড়াশোনা শেষ করে হতে চেয়েছিলেন ব্যবসায়ী। শুরু করে ছিলেন মাছের রেনু থেকে পোনা উৎপাদন। পরে এক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে হয়েছেন পুরোদস্তুর কৃষক। বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এই শিক্ষিত বেকার যুবক।
[৩] এখলাস উদ্দিন সবুজ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় পলিনেট হাউজ প্রর্দশনী বাস্তবায়নে পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্য ফসল ক্যাপসিকাম আবাদ করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন সম্প্রতি। তবে স্থানীয়ভাবে ক্যাপসিকাম বিক্রি না করতে পেরে কিছুটা বিপাকেও পড়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা সবুজ ।
[৪] সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল ও হলুদ রঙের ক্যাপসিকাম। অধিক ফলনের আশায় ক্যাপসিকাম ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক এখলাস উদ্দিন সবুজ। তার হাতের ছোঁয়া-যত্ন আর পরিচর্যায় ক্যাপসিকামের চারাগুলো হয়ে উঠেছে হৃষ্টপুষ্ট।
[৫] এখলাস উদ্দিন সবুজ বলেন, আমি আধুনিক প্রযুক্তিতে মার্চিং পেপার দিয়ে টমেটো চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিস পলিনেট হাউজ উপহার দেয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পে আমি চুক্তিবদ্ধ হই, যে এই শেডে উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ করবো। শুধু ক্যাপসিকাম করতে হবে তা না।
[৬] সবুজ বলেন, ২০২৩ সালের জুন মাসে শেড করা শেষ হয় কিন্তু ঠিকাদার পানি সাপ্লাই, ফগার ইত্যাদি সেটিং না করাতে ডিসেম্বরে শেড চালু হয়। পরে ডিসেম্বর মাসে বগুড়ার এগ্রো ওয়ান কোম্পানি থেকে ২২ টাকা করে ১১৪০টি ক্যাপসিকাম চারা কিনে আনি। শেডের ভিতর ১০ শতাংশ জমিতে চারাগুলো রোপণ করি। চারা রোপণের দু'মাস পর থেকেই গাছে ফল আসা শুরু হয় এবং বিক্রিও শুরু করি। তবে সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড়ে ৪০টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
[৭] সবুজ আরও বলেন, ক্যাপসিকাম চাষে জমি প্রস্তুত, লেবার, সার, বালাইনাশক ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্যাপসিকাম সবজিটি খাওয়ায় অভ্যস্ত না থাকায় স্থানীয় কোনো বাজারে বিক্রি হয় না বললেই চলে। বিক্রি করতে হয় ঢাকার কাওরান বাজারে। কাওরান বাজারে পণ্য পাঠালে খরচ বেশি পড়ে তাই পাঠাতে পারি না। তবে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের সুগন্ধা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ও বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বিক্রি করছি। প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে ৩৫০ টাকা দরে। ইতিমধ্যে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে। এখনও জমিতে যে পরিমাণ ফসল আছে, তাতে অন্তত আরও দুই লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
[৮] কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ক্যাপসিকাম একটি বৈশ্বিক সবজি। এটাকে মিষ্টি মরিচ নামেও ডাকা হয়। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে কৃষকরা এর চাষ করে থাকেন। যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও প্রচুর। কারণ সারা বিশ্বে টমেটোর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে এখন ক্যাপসিকাম ফল। পুষ্টি মানের দিক থেকে অত্যন্ত মূল্যবান সবজি বলে পুষ্টিবিদদের অভিমত। তাঁদের মতে, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'সি' থাকার কারণে এবং অতি সহজেই চাষ করা যায় বলে দেশের জনসাধারণকে ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।
[৯] কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ক্যাপসিকাম উচ্চ মূল্যের একটি নতুন ফসল। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় এ উপজেলায় আগামীতে ক্যাপসিকামের চাষ আরো বাড়বে বলে আশা করছি।
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :