হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর: [২] জেলার সালথা উপজেলার নদী-নালা ও খাল-বিলে চায়না দুয়ারী বা চায়না জাল ব্যবহার করে মাছ শিকারে ব্যস্ত অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এতে দেশীয় মাছ বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়ছে জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র। গ্রামগঞ্জের বিল-ঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ জাল দিয়ে চলছে এমন মাছ শিকারের মহোৎসব।
[৩] জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন নদীতে প্রায় এক হাজারের মত চায়না জাল বা চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার করা হচ্ছে। শুধু নদীগুলোতেই নয়, খাল ও বিলে একই পন্থায় মাছ ধরা হচ্ছে। মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ংকর চায়না দুয়ারী নামক ফাঁদে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ ধরা পড়ছে। সহজেই সব ধরনের মাছ ধরার আশায় বিভিন্ন নদীনালায় অহরহ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন এ জাল।
[৪] এ ধরনের ক্ষতিকর ফাঁদ ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযান চালিয়েও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। মিঠাপানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সূক্ষ্ম এ জালের ফাঁদে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে নদ-নালার পানি বৃদ্ধি, হ্রাস ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, ট্যাংরা, কই, শিং, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ দেশি প্রজাতির সব মাছ চায়না দুয়ারী নামক জালে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছশূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী ও খাল-বিল।
[৫] নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সালথার সিংহপ্রতাপ গ্রামে জাল দিয়ে মাছ শিকার করা একজন বলেন, ৪টি লোহার ফ্রেমের ভেতর জাল দিয়ে তৈরি করা হয় চায়না জাল। নদীতে বিভিন্ন পয়েন্টে ২টি চায়না জাল পেতেছি। আমার মত অনেকেই এলাকা ভাগ করে চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে। বিকেলে পেতে রাখা হয়, রাতের বেলা একবার এবং ভোরের দিকে একবার জাল তুলে মাছগুলো সংগ্রহ করি। পরে সেই তাজা মাছগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়।
[৬] কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, চায়না জাল বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় জাল বিক্রেতাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জাল ক্রয় করা হয়। তবে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের দৃশ্যমান কোনো অভিযান না চালানোর কারণে নির্বিঘ্নে নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবায় মাছ শিকার করছে কিছু অসাধু মৎস্যজীবী ও সৌখিন মাছ শিকারীরা।
[৭] স্থানীয়রা জানান, এই অবৈধ জাল আমদানি করছে এবং বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া জেলা-থানা মৎস্য কর্মকর্তাসহ প্রত্যেক জায়গায় সরকারের লোকজন রয়েছে। তাদের নজরদারি বাড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতদের কাজে লাগাতে পারলে এটি বন্ধ করা সম্ভব হবে।
[৮] এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহ্ মো. শাহরিয়ার জামান সাবু বলেন, নদীতে পানি আসতে শুরু করায় অবৈধ চায়না জালগুলোর ব্যবহার বাড়ছে। পাট কাটার পর নদী-নালায় জাগ দেওয়ায় পানি কিছুটা দূষণ হয়েছে। এ দূষণে কিছু মাছ মারাও যাচ্ছে। তাই, অভিযান চালতে একটু দেরি হয়েছে। তবে, নতুন এই উপজেলায় যোগদান করেছি। তাই, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিব।
[৯] তিনি বলেন, দুই-একদিনের মধ্যে আমরা মাইকিং করে অবৈধ চায়না জাল ও দুয়ারি বন্ধে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালাতে চেষ্টা করবো। তারপরে আমরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে নামবো।
[১০] সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় মৎস্যজীবী ও অবৈধ চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ শিকারকারীদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে, তারা সর্তক না হলে প্রয়োজনে অভিযান চালিয়ে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
প্রতিনিধি/একে