শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ সীমান্তের পাশে তিন সেনা ঘাঁটি স্থাপন করেছে ভারত, সম্পর্কের প্রভাব নিয়ে নতুন প্রশ্ন ◈ সেনাপ্রধানকে নিয়ে অপপ্রচার, সতর্ক করল আইএসপিআর ◈ জাতির প্রকৃত শক্তি শুধু সম্পদের মধ্যেই নয়: প্রধান উপদেষ্টা ◈ গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন শিগগিরই: ট্রাম্প ◈ জুলাই বিপ্লবের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা পাইনি — উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ ক্ষুদ্র ইন্টারনেট অপারেটরদের বাজার থেকে হটাতে ডিডস আক্রমণ চলছে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ◈ হিন্দুদের কারো কারো ‘জামায়াতে যোগ দেওয়ার’ কারণ কী, তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ আছে? ◈ বাংলা‌দেশ‌কে হা‌রি‌য়ে সি‌রি‌জে ২-১ এ এ‌গি‌য়ে গে‌লো আফগা‌নিস্তান ◈ নো হাংকি পাংকি’? এটা কি রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ◈ গণতন্ত্র ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে, ৭ নভেম্বরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৩৫ বিকাল
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাড়ছে শিশু নির্যাতন: মুরাদনগরে বিকৃত আসক্তিতে টার্গেট হচ্ছে শিশুরা

এন এ মুরাদ, মুরাদনগর: একটি ছোট্ট মেয়ে, নাম তার আদিবা জাহান মিম। বয়স মাত্র ছয় বছর। খেলনা হাতে মাঠে দৌড়ানো আর বাবার কোলে ঘুমিয়ে পড়াই ছিল তার পৃথিবী। কিন্তু নিষ্পাপ এই শিশুটি এখন নেই। তাকে ধ’র্ষ’ণের পর হ’ত্যা করে লাশ ফেলে দেওয়া হয় পানিতে—ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার সীমানারপাড় গ্রামে। ঘাতক ইয়াসিন (১৬) হারুন মিয়ার ছেলে নিহত মিমের চাচাতো ভাই।

গত সোমবার রাতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সনাক্ত করে নীজ  ঘর থেকে  পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে আদালতে নিয়ে গেলে সে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। এমন নিষ্ঠুরতা যেন মানবতার গালিচায় এক গভীর কালো দাগের ছায়া ফেলেছে।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। একদিনের ব্যাবধানে একই উপজেলার ছালিয়াকান্দি গ্রামে আরেক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। মাত্র চার বছরের এক শিশু পাশের বাড়ির রান্নাঘরে ধ’র্ষ’ণের শিকার হয়। 

ঘটনার পর মামলা হলে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) অভিযান চালিয়ে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে ধর্ষক বাবু (২০)-কে গ্রেফতার করে। বাবু ছালিয়াকান্দি  গ্রামেরই রমিজ মিয়ার ছেলে।

এই দুটি ঘটনার পর মুরাদনগর উপজেলার সচেতন সমাজের  মাঝে  নেমে এসেছে শোক, ক্ষোভ আর আতঙ্কের ছায়া। মানুষ বলছে, " সামাজিক অবক্ষয় আর বিকৃত মানুষিতা থেকে জন্ম নিচ্ছে ভয়াবহতা। এমন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলছে। এগুলো শক্ত আইন দ্বারা প্রতিহত করা প্রয়োজন ''। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘাতক ইয়াসিন পর্ণমুভিতে আসক্ত ছিলো। যার কারণে সে এলাকায় গম্ভীর ও একাকী চলত ওদিকে বাবুও একই প্রকৃতির বখাটে। পর্ণ আসক্তি থেকে বিকৃত হয়ে তারা শিশুদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে।  

তারা আরো বলেন, যুবকরা অশ্লীল ও বিকৃত ভিডিওতে আসক্ত হয়ে পড়ার পিছনে অন্যতম কারণ সহজলভ্য মোবাইল ও ইন্টারনেটের ব্যবহার। রয়েছে অভিভাবকদের  উদাসীনতা। যার ফলে একের পর এক ঘটছে শিশু নির্যাতনের মতো জঘন্য ঘটনা।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, “পর্নোগ্রাফি আসক্তি তরুণদের বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তারা ধীরে ধীরে কল্পনার জগতে বাস করতে শুরু করে, যেখানে সহিংসতা ও যৌন বিকৃতি স্বাভাবিক মনে হয়।”

সমাজকর্মীরা মনে করেন, নৈতিক শিক্ষা, পারিবারিক তত্ত্বাবধান ও সামাজিক সচেতনতার অভাবে এ ধরনের অপরাধ বাড়ছে। অনেক অভিভাবকই জানেন না তাদের সন্তান মোবাইলে কী দেখে বা কাদের সঙ্গে সময় কাটায়। গ্রামের ছেলেরা আজকাল মোবাইলে ব্যস্ত, কিন্তু সেই ব্যস্ততা অনেক সময় বিপজ্জনক আসক্তিতে রূপ নিচ্ছে।

স্থানীয় অভিভাবক রফিকুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন বলেন, “আমাদের সন্তানদের এখন ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। স্কুলে যেতে ভয় লাগে, খেলার মাঠেও অজানা আতঙ্ক।”

পুলিশ ও র‍্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ নয় প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা ও পারিবারিক নজরদারি। পরিবারে সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, তাদের অনলাইন ব্যবহারে নজর রাখা এবং নৈতিক শিক্ষা জোরদার করা সময়ের দাবি।

মুরাদনগরের সাম্প্রতিক এই দুইটি ঘটনা শুধু দুটি পরিবারকেই শোকের সাগরে ডুবিয়েছে তা নয়, কাঁপিয়ে দিয়েছে পুরো সমাজকে। যখন শিশুদের হাসি ভয় ও আতঙ্কে ঢেকে যায়, তখন তা কেবল অপরাধ নয়—মানবতারও পরাজয়।

শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই উদ্যোগ না নিলে, এই বিকৃত আসক্তির যুবকরা গ্রাস করবে আরও অনেক নিষ্পাপ ফুটন্ত টগবগে প্রাণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়