শিরোনাম
◈ ট‌রে‌ন্টো‌তে হোঁচট খে‌লো মেসির ইন্টার মায়া‌মি ◈ ব্রিটিশ মেয়রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি আত্মীয়-স্বজনের জন্য ‘ভিসা জালিয়াতির’ অভিযোগ ◈ বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ গ্রহণে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করল আইএমএফ ◈ বেনজীরের অর্থপাচার মামলায় মার্কিন নাগরিক এনায়েত ৪ দিনের রিমান্ডে ◈ প্রকাশ্যে নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী, বললেন দেশ ছেড়ে পালাব না ◈ ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট ছাপানো নিয়ে বিতর্ক, যা বললেন উপাচার্য ◈ জনসভায় মৃত্যুর রোল, অবশেষে মুখ খুললেন থালাপতি বিজয় ◈ সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক এগিয়ে নিয়েছি: সিইসি ◈ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা, করা হলো সতর্ক ◈ ড. ইউনুসের কথা শুনে মনে হয়েছিলো, আমি জিয়াউর রহমানের কথা শুনাছিলাম: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:৪৪ সকাল
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হাটহাজারীর বিমানবন্দর

যুদ্ধবিমানের ওঠানামার শব্দে কানে তালা লেগে যেত। রানওয়েতে দেখা যেত বিমানের সারি। সেখানে দাঁড়িয়ে জ্বালানি তেল নিত বিমানগুলো। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পশ্চিম আলমপুর এলাকার বাসিন্দারা এমন গল্প শুনেছেন তাঁদের বাপ-দাদার মুখে। এলাকাটি এখন ‘পাক্কা রাস্তা’ নামে পরিচিত। এই পাক্কা (পাকা) রাস্তা আসলে বিমানবন্দরের রানওয়ে। এখন কেউ বলে না দিলে সেই বিমানবন্দর খুঁজে বের করা কঠিন। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে প্রায় ৮২ বছর আগের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিমানবন্দরটি। চারপাশে গড়ে উঠেছে খেতখামার, বাড়িঘর।0

হাটহাজারী সদর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে পশ্চিম আলমপুর এলাকায় ৩৭ একর জায়গায় ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৩ সালে এই বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিল। লোকজনের কাছ থেকে ব্যবহারের জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার চুক্তিতে জায়গাগুলো নিয়েছিল। জমির মালিকদের দেওয়া হতো ভাড়া। তখনকার দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থার দিনে এ রকম একটি বিমানবন্দর নির্মিত হয়েছিল কেবল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া যুদ্ধবিমানের জন্য গোলাবারুদ, রসদ ও জ্বালানি তেল সরবরাহের প্রয়োজনে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন নথি ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৩৯ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি বাহিনী দ্রুত বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) সীমান্ত দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। এ কারণে ব্রিটিশ ভারত থেকে বার্মায় সেনা ও রসদ পাঠাতে চট্টগ্রাম হয়ে ওঠে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রপথে আসা অস্ত্র, গোলাবারুদ ও খাদ্যসামগ্রী চট্টগ্রাম বন্দরে নামিয়ে সেগুলো বিমান বা স্থলপথে আরাকান সীমান্ত ও বার্মার অভ্যন্তরে পাঠানো হতো। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা আর মৌসুমি বৃষ্টিতে ভরা কাদাপথের কারণে স্থলপথে রসদ পাঠানো ছিল কঠিন, তাই মিত্রশক্তি আকাশপথে সরবরাহে জোর দেয়। এর ফলেই ১৯৪৪ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে একটি সামরিক বিমানঘাঁটি স্থাপন করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির মার্কিন সরকারি মুদ্রণালয় থেকে ১৯৬১ সালে প্রকাশিত ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিমান বাহিনীর কমব্যাট ইউনিট’ বইয়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন বিমানঘাঁটি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। লেখক মওরার, মওরারের লেখা ওই বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, হাটহাজারীতে মূলত সরবরাহের সুবিধা দিতেই বিমানবন্দর তৈরি হয়েছিল। বিমানবন্দরটি পরিবহন ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। যেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্স এবং ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্স যৌথভাবে সরবরাহ বিমান পরিচালনা করত। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিমানঘাঁটি বন্ধ হয়ে যায়।

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই বিমানবন্দরের প্রশাসনিক ভবন, সিগন্যাল হাউসসহ যেসব চিহ্ন রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে এগুলোকে সংরক্ষণ করা উচিত। পাশাপাশি যে প্রেক্ষাপটে এই বিমানবন্দর তৈরি হয়েছিল তা স্থাপনাগুলোর পাশে খোদাই করে লেখা দরকার। বর্তমান প্রজন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী এই এলাকা সম্পর্কে জানতে পারবে: মনসুর আলী, প্রধান শিক্ষক, আলমপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়।

২৩ সেপ্টেম্বর সরেজমিন দেখা যায়, ধানখেতের পাশে বিমানবন্দরের প্রশাসনিক ভবনের কাঠামো এখনো টিকে আছে। লতাপাতায় ছেয়ে গেছে ভবনটি। ইটের দেয়াল ছাড়া আর কিছু নেই। সিগন্যাল হাউসটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আশপাশে গড়ে উঠছে বসতি। জ্বালানি তেলের জন্য রিজার্ভার কিছু অংশ দেখা যায়, তা–ও মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে। ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে রানওয়ে।

সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তান আমলে কিছুই করা হয়নি। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কোনো সরকারের আমলে এই বিমানবন্দরের দিকে নজর দেওয়া হয়নি।

হাটহাজারী সদর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে পশ্চিম আলমপুর এলাকায় ৩৭ একর জায়গায় ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৩ সালে এই বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিল। লোকজনের কাছ থেকে ব্যবহারের জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার চুক্তিতে জায়গাগুলো নিয়েছিল। জমির মালিকদের দেওয়া হতো ভাড়া। তখনকার দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থার দিনে এ রকম একটি বিমানবন্দর নির্মিত হয়েছিল কেবল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া যুদ্ধবিমানের জন্য গোলাবারুদ, রসদ ও জ্বালানি তেল সরবরাহের প্রয়োজনে।

পশ্চিম আলমপুর খিলপাড়ায় সিগন্যাল হাউসের পাশের বাসিন্দা সাজ্জাদ আলীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, তাঁর পূর্বপুরুষেরা নানা ভিটেবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গিয়েছিলেন সেই সময়। তাঁদের জায়গা ব্যবহার করে সিগন্যাল হাউসসহ বিমানবন্দর তৈরি করে ব্রিটিশরা। যুদ্ধ শেষের পর তাঁর নানারা আবার বসতভিটায় ফিরে আসেন। পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছেন, যুদ্ধবিমানগুলোতে জ্বালানি তেল ভরার জন্য এবং জাপানিদের ওপর বোমা ফেলার উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করা হয়েছিল।

বিমানবন্দরটির দক্ষিণে রয়েছে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণাগার, কৃষি ইনস্টিটিউট এবং হর্টিকালচার সেন্টার। দক্ষিণ-পশ্চিমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হালকা ও ভারী ফায়ারিং রেঞ্জ। উত্তরে শুষ্ক মৌসুমে কৃষি আবাদের জন্য ৩০ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে পানিনিষ্কাশনের প্যারালাল খাল।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনসুর আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই বিমানবন্দরের প্রশাসনিক ভবন, সিগন্যাল হাউসসহ যেসব চিহ্ন রয়েছে, ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে এগুলোকে সংরক্ষণ করা উচিত। পাশাপাশি যে প্রেক্ষাপটে এই বিমানবন্দর তৈরি হয়েছিল তা স্থাপনাগুলোর পাশে খোদাই করে লেখা দরকার। বর্তমান প্রজন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী এই এলাকা সম্পর্কে জানতে পারবে। এই এলাকায় কৃষি গবেষণাগার, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, দুগ্ধখামার, সবুজ পাহাড় রয়েছে। ঐতিহাসিক স্থাপনা ও সবুজ পাহাড়কে ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনাও রয়েছে। এতে লোকজনের বিনোদনের পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব পাবে। সূত্র: প্রথম আলো 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়