জাকির হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ (৫০শয্যা) বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে ৩ জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযুক্ত কর্মচারীরা হলেন, সিনিয়র স্টাফ নার্স (ইনচার্জ) চন্দনা রাণী রায়, ফার্মাসিস্ট আনোয়ার হোসেন, মেডিকেল টেকনোলজী ল্যাব মিজানুর রহমান।
গত বৃহষ্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন এবং হাসপাতালে মজুত ওষুধ রোগীদের না দিয়ে বাইরের দোকান থেকে সংগ্রহে বাধ্য করা, ঔষুধের হিসাব কিতাবে গরমিল, সরকারি ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে বাইরের ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পাঠানোর অভিযোগ সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মেলে।
দুদকের সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজীর নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। ছদ্মবেশে অভিযান শুরু করে তারা হাসপাতালের বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এবং ভর্তি রোগীদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পান।
সে সময় সিনিয়র স্টাফ নার্স (ইনচার্জ) চন্দনা রাণী রায়ের হেফাজতে ৭০টি অতিরিক্ত ও হিসাববহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন (সেফজোন) পাওয়া যায়।
ফার্মাসিস্ট আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুই মাসের ওষুধ বিতরণের কোনও রেকর্ড পাওয়া যায়নি। ওষুধ সংরক্ষণ ও সরবরাহে চরম অব্যবস্থাপনার প্রমাণ মেলে।
সেই সাথে সরকারি ল্যাব থাকা সত্ত্বেও সাধারণ রোগীদের হয়রানী করে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বাইরের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানোর অভিযোগ ওঠে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।
ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী জানান, হাসপাতালে এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়। এ সময় রান্নাঘর, গুদামঘর এবং বহির্বিভাগ ঘুরে দেখা হয়। রোগীদের দেয়া খাবার নিম্নমানের এবং ডায়েট চার্ট অনুযায়ী নয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত থাকলেও রোগীদের তা সরবরাহ না করে বাইরের ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করতে বলা হচ্ছে—এমন অভিযোগও দুদক তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
রংপুর বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা ও মানবাধিকার কর্মী নাহিদ পারভিন রিপা বলেন, পীরগঞ্জ হাসপতালে এত দুর্নীতি আমাদের জানা ছিল না। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি।
এ ব্যাপারে সিনিয়র স্টাফ নার্স (ইনচার্জ) চন্দনা রাণী রায় বলেন, আমি মানুষের সেবা করার জন্যে এক্সটা ইনজেকশন রেখেছি। আমার এখানে অনেক চাপ অনেক ডিউটি করতে হয় আমাকে বদলি করলে আমি খুশি হব।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার জানান, দুদক ৩ কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান জানান, দুদকের কাছ থেকে এখনো কাগজ পায়নি পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।