ফিরোজ আহম্মেদ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: বর্ষার পানিতে থৈ থৈ করছে ঝিনাইদহের মাঠ-ঘাট, বিল-বাওড় ও পুকুর। এতে ভেসে গেছে বিভিন্ন চাষের পুকুরের ছোট পোনা ও রেনু মাছ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির মানুষ মাছ ধরতে ব্যবহার করছে পরিবেশবিধ্বংসী চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল।
কালীগঞ্জ উপজেলার নদী, খাল-বিল এখন সয়লাব অবৈধ এসব জালে। যদিও আইন অনুযায়ী এই জাল বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তথাপি উপজেলা শহর ও গ্রামীণ হাটবাজারে এসব জাল দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের একাধিক অভিযানে জাল জব্দ, মামলা ও জরিমানার পরও থেমে নেই এর ব্যবহার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কারেন্ট জালের চেয়েও ক্ষতিকর চায়না দুয়ারী জাল। এতে মাছের রেণু, পোনা থেকে শুরু করে বড় মাছ—সবই ধরা পড়ে। এমনকি জলজ প্রাণী ও কীটপতঙ্গও রেহাই পায় না। অতিমিহি বুননের এ জাল পানির নিচে সহজেই তলিয়ে যায় এবং বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। এতে দেশি মাছের ডিম ও পোনাও আটকা পড়ে, যা মাছের প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চিত্রা ও বেগবতী নদীসহ নাটোপাড়া বিল ও বিভিন্ন খাল-বিলে এসব অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরার উৎসব চলছে। বর্ষার পানিতে মাছের প্রজনন সময় হওয়ায় পুটি, কই, ট্যাংরা, শিং, মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ এখন ঝাঁকে ঝাঁকে আটকা পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াকুব আলীসহ অনেকেই জানান, যদি এইভাবে চলতে থাকে, তবে অচিরেই দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তারা অভিযোগ করেন, কালীগঞ্জ শহরের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় এসব জাল বিক্রি করছেন, যা দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন।
নাটোপাড়া গ্রামের ইমন হোসেন বলেন, “এখন প্রাকৃতিকভাবে দেশি মাছ ডিম ছাড়ছে। অথচ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জালে ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়ছে। এভাবে চললে আগামী দিনে দেশীয় মাছের অস্তিত্বই থাকবে না।”
কালীগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, “আমাদের অবৈধ জাল বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে সব জায়গায় একযোগে অভিযান সম্ভব হয় না। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন আলম বলেন, “আমরা মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। একাধিকবার কারেন্ট জাল জব্দ করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে আবার বিক্রির চেষ্টা করছে। অবৈধ জাল বিক্রি ও ব্যবহারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযান আরও জোরদার করা হবে।”
দেশীয় মাছ রক্ষায় এখনই প্রয়োজন কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ, জনসচেতনতা ও অবৈধ জাল উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। তা না হলে প্রাকৃতিক মাছের ভাণ্ডার ধ্বংস হয়ে যাবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।