শহিদুল ইসলাম, মুকসুদপুর প্রতিনিধি: নিখোঁজের তিন দিন পর মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের কংশুর এলাকা থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় জে.কে.এমবি মল্লিক উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী গৌতম গাইনের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে নৈশ প্রহরী গৌতমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গৌতম গাইন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের কলিগ্রামের বিমল গাইনের ছেলে।
বৌলতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মোল্যা আফজাল হোসেন মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত বুধবার (০৯ জুলাই) রাত সাড়ে ৮ টায় কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন নৈশ প্রহরী গৌতম গাইন। এরপর থেকে বাড়ি ফিরে না আসায় তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করা হয়। পরের দিন বৃহস্পতিবার মুকসুদপুর থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি নং-৫১৫) করে নিহতের স্ত্রী মিলি বৈরাগী। পরে শুক্রবার (১১জুলাই) বিকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কংশুর এলাকার মধুমতি বিলরুট চ্যানেলে মরদেহ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
তিনি আরো বলেন, মরদেহের হাত-পা বাঁধা ছিলো। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন এসে নৈশ প্রহরী গৌতম গাইনের মরদেহ বলে সনাক্ত করে। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকান্ড বলে ধারনা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা বিশিস্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
নিহত গৌতম গাইনের স্ত্রী মিলি বৈরাগী বলেন, দেড় মাস আগে, ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ষড়যন্ত্র করে স্কুলের গ্রীল কেটে চুরির অপবাদ দেয় আমার স্বামীর বিরুদ্ধে। পরে তার থেকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নৈশ প্রহরী চাকরি দিতে চেয়েছিলো। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক আমার স্বামীকে নিয়োগ দেয়। এই নিয়ে চারজন শিক্ষক সব সময় আমার স্বামীর বিরুদ্ধাচারন করে আসছিলো। যে রাতে তিনি নিখোঁজ হন ওই রাতে সাড়ে ৮ টায় ডিউটিতে যান।
রাতে তার মুঠোফোনে কল দিলে বন্ধ পাই। সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি সেখানে নেই। ওই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজের দ্বায়িত্বে থাকা মো. বাচ্চু মিয়ার কাছে আমার স্বামীর খোঁজ নিই। তিনি ওই রাত সাড়ে ৮ টার পর আমার স্বামীকে দেখেননি বলে জানান। পরেরদিন (বৃহস্পতিবার) মুকসুদপুর থানায় সাধারণ ডায়রি করি (জিডি নং-৫১৫)।
তিনি আরো বলেন, শুক্রবার বিকালে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার স্বামী গৌতম গাইনের মরদেহ বলে সনাক্ত করি। আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
ওই বিদ্যালয়ে নতুন ভবনে কাজের দ্বায়িত্বে থাকা মো.বাচ্চু মিয়া বলেন, ওই রাত সাড়ে ৮ টায় একটা খাবারের বাটি হাতে নিয়ে আমাদের কক্ষে প্রবেশ করে গৌতম। কিছু সময় থাকার পর তার কক্ষে দিকে চলে যায়। আমি রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাকে বলার জন্য ডাকাডাকি করলে সাড়া না পেয়ে গেটে তালা বন্ধ দেখি। তখন ভাবলাম হয়তো পাশে কোথাও গেছে। সকালে তার স্ত্রী মিলি বৈরাগী তার খোঁজে আসলে জানতে পারি সে নিখোঁজ।
এ ব্যাপারে মুকসুদপুরের সিন্দিয়াঘাট পুলিশ ফাঁড়ির উপ পরিদর্শক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কংশুর এলাকার মধুমতি বিলরুট চ্যানেল থেকে নিখোঁজ নৈশ প্রহরী গৌতম গাইনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গৌতম গাইনের মোবাইল কল লিস্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কল লিস্ট পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করা হবে।