এম আর আমিন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গত বছরের ডিসেম্বরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও, দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তদন্ত শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, তদন্তের অগ্রগতি না হওয়ায় জনমনে হতাশা ও সন্দেহ উভয়ই দানা বেঁধেছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৬ বছরের শাসনামলে চট্টগ্রামের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। সিডিএর একাধিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা চলমান থাকলেও দীর্ঘদিন তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও নেই অগ্রগতি
সিডিএর প্রকল্প বাস্তবায়নে সহকারী প্রকৌশলীদের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) হিসেবে নিয়োগ, গুরুত্বপূর্ণ পদে ঘনিষ্ঠদের বসানো, কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে গত ১১ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু কার্যত কোনো বৈঠক হয়নি, তদন্তেরও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
পুনর্গঠিত কমিটিও থেমে
গত ২৩ এপ্রিল নতুন করে গঠিত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগ-১ এর অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মতিনকে। সদস্যসচিব করা হয় সিডিএর সচিব রবীন্দ্র চাকমাকে। বাকি সদস্যরা হলেন:
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইদ মাহবুব মোরশেদ
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. নাজমুল আলম
স্থপতি ও সিডিএ বোর্ড সদস্য সৈয়দা জারিনা হোসেন
বোর্ড সদস্য সৈয়দ কুদরত আলী
কমিটিকে ২ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা থাকলেও এখনো কোনো বৈঠকই হয়নি।
ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তে চাপ ও তদবির
সিডিএর একাধিক প্রকৌশলী ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, অনিয়ম করে অর্জিত অর্থে কেউ বিদেশে সন্তানদের পড়াশোনা করাচ্ছেন, কেউ বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন, আবার কেউ বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। তদন্তে দেরির পেছনে দুর্নীতিবাজদের তদবির ও রাজনৈতিক প্রভাবের কথাও উঠেছে।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অনেকেই তদন্ত বন্ধ বা বিলম্ব করতে নানা কৌশলে প্রভাব খাটাচ্ছেন। কেউ কেউ তদন্ত কমিটিকে ম্যানেজের চেষ্টাও করছেন।”
কর্তৃপক্ষের নীরবতা ও অজুহাত
সিডিএ সচিব ও কমিটির সদস্যসচিব রবীন্দ্র চাকমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ‘ব্যস্ততার অজুহাতে’ দেখা হয়নি। কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মতিন বর্তমানে অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
তবে কমিটির সদস্য উপসচিব মো. নাজমুল আলম বলেন, “কাজটি ছোট নয়, এর ব্যাপ্তি অনেক বড়। আমরা কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দেব না। যা সত্য তাই প্রতিবেদন হবে।”
তিনি আরও জানান, আহ্বায়ক সুস্থ হলেই কমিটি কাজ শুরু করবে।
দীর্ঘদিন ধরে সিডিএর প্রকল্প বাস্তবায়নে অভিযোগ সত্ত্বেও কার্যকর তদন্ত না হওয়া ও প্রশাসনিক নিস্ক্রিয়তা প্রশ্ন তুলছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের বিলম্ব দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।