টাঙ্গাইল পৌর শহরের অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা, নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা
আরমান কবীর : শতাব্দি প্রাচীন ও প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হওয়া সত্বেও টাঙ্গাইল পৌরসভার অধিকাংশ সড়কের বর্তমানে বেহাল দশা। শহরের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পৌর কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া সড়ক গুলোর সাথে সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই প্রতিবছর শহরে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এই ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাট ও অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে শহরবাসীর দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা পৌরবাসীর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বটতলা-বেবিস্ট্যান্ড সড়কটির বেহাল দশা। শহরের যানজট নিরসনে এই সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার পরেও দীর্ঘদিনধরে কোন ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে ট্রাক-বাসসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে এই সড়কে।
শহরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ক্লাব রোড। এই সড়কটি মূলত একটি লিংক রোড। যা শহরের ব্যস্ততম জেলা সদর রোড ও ভিক্টোরিয়া রোডকে যুক্ত করেছে। পৌর ভবন থেকে হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে ভরা। এছাড়া এই সড়কটিতে নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে সারাবছর এই সড়কের একটি অংশ পচা ড্রেনের পানিতে ডুবে থাকে।
শহরের মালঞ্চ সিনেমা হল-সাহাপাড়া-বাজিতপুর সড়কটি বৃষ্টি হলেই পানির নিচে ডুবে যায়। যে কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এছাড়া জমে থাকা ড্রেনের পানি গিয়ে ঢুকে পড়ে বসত বাড়িতে। ফলে ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দিসহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগের প্রকোপ এইসব এলাকায় বেশি দেখা যায়।
এছাড়া শহরের জেলা সদর হয়ে ধুলেরচর মাদ্রাসা মোড় পর্যন্ত সড়কটির খুবই বেহাল দশা। নতুন বাসস্ট্যান্ডের যানজট এড়াতে অনেকেই এই সড়কটি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেন। বর্তমানে এই সড়কে কোন সিএনজি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল করতে চায়না। ফলে শহরের ১ ও ২ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দাসহ জেলার উত্তর অংশের মানুষদের শহরে যাতায়াতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে । এই সড়কটি জেলা গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন।
এছাড়া ৩নং ওয়ার্ডের স্টেডিয়াম ব্রিজ থেকে মেসের মার্কেট পর্যন্ত সড়কটি ভেঙেচুরে বর্তমানে যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা বিকল্প সড়ক হিসেবে হাউজিং এস্টেটের সড়ক ব্যবহার করে অনেকটা ঘুরে শহরে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে।
পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের দিঘুলিয়া নিজাম উদ্দিন সড়কের শাহ্ আলমের বাড়ি থেকে কাজীবাড়ি পর্যন্ত সড়কটির বেহাল দশা। সড়কটিতে নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এরফলে চলাচলে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা কাজী জহির সুমন বলেন, এই সড়ক ব্যাবহার করে দুটি প্রাইমারি স্কুল ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যাতায়াত করে। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাটি ডুবে যাওয়ার ফলে, তাদের বিদ্যালয় যেতে চরম সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা এই সড়কটি ব্যবহার করে, শহরে যাতায়াত করে। স্থানীয়দের শহরে আসার একমাত্র সড়ক এটি। এই সড়কটির দ্রুত উন্নয়নের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
টাঙ্গাইল কোর্টের আইনজীবি জসীমউদ্দীন বলেন, আদালত প্রাঙ্গনের রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। বর্তমানে রাস্তাটির সলিং উঠে গিয়ে রড বেড় হয়ে গেছে। বের হয়ে থাকা এইসব রডের সাথে বেজে প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। জেলা সদরের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত মেরামতের জোর দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া এই সড়কে নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাটি পানিতে ডুবে থাকে। রাস্তা মেরামতের সাথে সাথে রাস্তার ড্রেন নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কলেজ পাড়া এলাকার নিক্সন খান বলেন, বটতলা-বেবিস্ট্যান্ড সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইল শহরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।
টাঙ্গাইল জেলা ব্যবসায়ী ঐক্যজোটের সভাপতি আবুল কালাম মোস্তফা লাবু বলেন, পৌর শহরের অধিকাংশ সড়ক বর্তমানে ব্যাবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া শহরে নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরে জলাবদ্ধতার তৈরি হয়। টাঙ্গাইল শহরের রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে প্রশাসক হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা সবাই সরকারি আমলা। তাদের জনসম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে। ফলে তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। জনগণের সাথে সম্পৃক্ত এমন প্রশাসক নিয়োগ দিলে শহরের রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি আশাকরি।
টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভু রাম পাল বলেন, জেলা সদর থেকে ধুলেরচর মাদ্রাসা মোড় পর্যন্ত সড়কটি গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন। বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগের বাজেট না থাকায় টাঙ্গাইল পৌরসভাকে রাস্তাটি মেরামতের অনুরোধ করা হয়েছে। শহরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি মেরামতের বাজেট টাঙ্গাইল পৌরসভা মন্থনালয়ে প্রেরণ করেছে। আশাকরি অতিদ্রুতই রাস্তাটির মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় টাঙ্গাইল ও পৌরসভার প্রশাসক শিহাব রায়হান বলেন, রাস্তাগুলোর বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। পর্যায়ক্রমে দ্রুত রাস্তাগুলো মেরামত করা হবে। এছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থারও উন্নতকরন করা হবে।