তেজগাঁওয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের পর মর্গ থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে বাড়ি নিয়ে গেছেন স্বজনরা।
তারা বলছেন, হতদরিদ্র পরিবারটির অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার সামর্থ্য নেই। তাই এক আত্মীয়ের অটোরিকশায় লাশ তেজকুনি পাড়ায় নেন তারা।
সোমবার সকালে নিখোঁজ হয় পাঁচ বছরের শিশু রোজা মনি। তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন; এলাকায় মাইকিংও করা হয়।
পরের দিন সকাল ১১টার দিকে বিজয় সরণি ফ্লাইওভারের নিচে ময়লার স্তূপে বস্তা পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। পরে বস্তার ভেতরে মেলে রোজা মনির নিথর দেহ।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে।
এদিন বিকাল ৫টার দিকে মর্গ থেকে সিএনজি অটোরিকশায় লাশ নিয়ে তেজকুনি পাড়ায় ফেরেন শিশুটির দুলাভাই মোবারক হোসেন।
মোবারক বলছেন, তার শ্বশুর বিদেশে থাকেন। তার পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে রোজা মনি ষষ্ঠ। তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। গ্রামে ‘শরিকদের’ সঙ্গে মামলা-বিবাদের জেরে কয়েক মাস আগে ঢাকায় আসে পরিবারটি। শিশুটির মাসহ পরিবারের তিনজন বাসাবাড়িতে কাজ করেন।
স্বজনরা বলছেন, চলতি মাসেই ঢাকার তেজকুনি পাড়ায় ছোট্ট একটি টিনসেড ঘরে ভাড়া উঠেছিল পরিবারটি। তাদের টিনের ঘরটির সর্বোচ্চ আয়তন হতে পারে ৮০ থেকে ৯০ বর্গফুট। সেখানেই ছয় সন্তানকে নিয়ে মা থাকতেন।
গ্রামের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত পরিবারটির কনিষ্ঠ সদস্য রোজা মনি ঘরের ভেতর প্রচণ্ড গরমে কাহিল হয়ে বাইরে খেলতে বের হত। এ অবস্থায় সোমবার দুপুর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরের দিন ঘরের পেছনে একটি আবর্জনার স্তুপে ছোট্ট নালায় পাওয়া যায় তার বস্তাবন্দি লাশ।
শিশুটির ১৬ বছর বয়সী মেজ বোন শিরিন বেগম বলছেন, ঢাকায় আসার পর তার মা একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন। সে আর তার ১২ বছরের আরেক কাজ নেন একটি পোশাক কারখানায়।
শিরিন বলেন, তাদের ঘরের পেছনে একটি একতলা ভবন ভাঙার কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। তার পাশে লোকজন ময়লা ফেলে; সেখানে একটি নালাও আছে। সেই নালায় একটি ছোট্ট বস্তা পড়ে ছিল। লোকজনের কথা শুনে তারা সেই বস্তা খুলে রোজা মনির লাশ পান। তার গলায় নাইলনের দড়ি পেঁচানো ছিল।
মর্গ থেকে লাশ অ্যাম্বুলেন্সের পরিবর্তে অটোরিকশায় নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মোবারক হোসেন বলেন, “আমরা খুবই গরিব মানুষ ভাই। এ গাড়িটা আমাদের গ্রাম-সম্পর্কের এক আত্মীয়ের। তাই এটাতে নিয়ে যাইতেছি।"
মোবারক বলছেন, তার শ্বশুর মালয়েশিয়ায় থাকেন, কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে সেখানে তার কোনো কাজ নেই। তিনি বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারেন না; গ্রামে অশান্তি। এসব কারণে তারা ঢাকায় চলে আসেন।
শিশুটির লাশ উদ্ধারের খবর জানাজানির পর দিনভর ওই বাড়িতে ছিল লোকজনের ভিড়। অটোরিকশায় করে মোবারক লাশ নেওয়ার পর সেখানে প্রচুর লোক ভিড় করেন।
তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলছেন, মঙ্গলবার স্থানীয়রা শিশুটির বস্তাবন্দি লাশ পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। শিশুটিকে হত্যার পর লাশ গুমের জন্য কেউ এটা করে থাকতে পারে।
তেজগাঁও থানার এসআই আবদুল কাদের বলছেন, “শিশুটির শরীরে ফোসকার মত ক্ষত রয়েছে। ধারণা করা যায় তার শরীরে গরম পানি বা এ ধরনের কিছু ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি।” উৎস: বিডিনিউজ২৪