মারুফ কামাল খান: প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু স্মৃতি এবং অল্পকিছু লেখাও আছে। খুব মনে পড়ছে তাঁকে। বেশি করে মনে পড়ার কারণ, হুমায়ূন আহমেদের জায়গাটা খালি পড়ে আছে। আজও কেউ সেটা পূরণ করতে পারেনি। সকলের ধরাছোঁয়ার অনেক বাইরে তিনি আজ। নশ্বর দেহ ছেড়ে হুমায়ূন আহমেদ এখন কেবলই এক অবিনশ্বর আত্মা মাত্র। কোনো ব্যক্তিমানুষই বিচ্যুতির ঊর্ধ্বে নয়। মানবীয় দুর্বলতায় মানুষ আকীর্ণ হবে, এটা অস্বাভাবিক কিছুও নয়। চরিত্র বিচারের সময়সীমা অতিক্রম করে গেছেন তিনি অনেক আগেই। কাজেই এখন আর ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদ নন, তাঁর সৃজনকর্মই শুধু আলোচনাযোগ্য।
আমাদের কালের সেরা ‘স্টোরি টেলার’ হুমায়ূন আহমেদ। আমাদের মতো ছোট ছোট সাধারণ মানুষের জীবনের খণ্ড চিত্রগুলো, বিচিত্র গল্পগুলো তিনি খুব নিপুণভাবে বলে গেছেন। তাই তিনি আমাদেরই লোক। ভারি আপন মনে হয় তাঁকে। সে কারণেই তিনি সাধারণের মধ্যে অগুণতি পাঠক তৈরি করেছেন। হয়ে উঠেছেন বর্তমান সময়ে এ দেশের মধ্যবিত্তের পারিবারিক লেখক। তাঁর এ আসনটা হয়তো আরও অনেক বছর ধরেই অটুট থাকবে। তার প্রবল জনপ্রিয়তার বিপরীতে অনেক যুক্তি দেওয়া যায়। শিল্প ও সাহিত্যের বিচারে কালোত্তীর্ণ ও উঁচুমানের লেখক তিনি ছিলেন কিনা তা নিয়ে করা যায় এন্তার বিতর্ক। তবে একথাও সমান সত্য যে, এখনো তার বিকল্প কেউ আসেনি এবং কেউই তার তুল্য জনপ্রিয়তার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি। তিনি এখনো বহুল পঠিত এবং সমকালীন, প্রাসঙ্গিক ও নন্দিত গল্পকার।
সময়ের ধোপে হুমায়ূন আহমেদ টিকবেন কিনা সে বিশ্লেষণটা আগামীতে তাকে ভুলিয়ে দেওয়ার মতো প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ না আসা পর্যন্ত তোলাই থাকুক আপাতত। একজন কথাশিল্পী হুমায়ূন আমাদের দিয়েছেন দু’হাত ভরে। তিনি আমাদের আনন্দ দিয়েছেন। হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন, সুখী ও বিষাদাক্রান্ত করেছেন। হুমায়ূন আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, একাধারে কাতর ও সাহসী করেছেন। তিনি আমাদের প্রেমিক ও কল্পনাপ্রবণ হতে শিখিয়েছেন। আমাদের মাঝে উসকে দিয়েছেন দেশপ্রেম। আধ্যাত্মিকতায় চিরআকৃষ্ট বাংলাদেশের মানুষের মননে তিনি সে রঙের তুলিও বুলিয়েছেন হালকা করে। অনেক কষ্টের মধ্যেও বাঁচার আকাক্সক্ষাকে তিনি দীর্ঘতরো করেছেন। আমাদের বিবর্ণ জীবনকে স্বপ্নময় ও ভালোবাসাকে প্রগাঢ় করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :