,আরিফ জেবতিক
৭২ ঘণ্টা পর কোনো নির্যাতিত মানুষ তাঁর ওপর সংগঠিত যৌণ নির্যাতনের জন্য মামলা করতে পারবে নাÑআদালতের এই পর্যবেক্ষণের সাথে দ্বিমত পোষণ করছি। ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না, এটি একটি মেডিকেল ইস্যু। কিন্তু ধর্ষণ মামলায় শুধু মেডিকেল ইস্যুই একমাত্র বিবেচনায় আসবে কেন? কেউ যদি কাউকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে ৭২ ঘণ্টা পরে অপহৃতাকে ছেড়ে দেয়, তাহলে কি ধর্ষণের মামলা হবে না?
ধর্ষণে শুধু শারীরিক ক্ষতি হয় এমন নয়, এর সাথে গভীর মানসিক ক্ষতি জড়িত। ভিকটিম ভয়াবহ ট্রমার মধ্য দিয়ে যায়। আমাদের সামাজিক ট্যাবু এমন গভীর সেখানে কোনো ধর্ষিতা এমনটা ভাবতে পারেন না যে, শরীরের ওপর দিয়েই নির্যাতনটা গেলো, আমি সুস্থ হয়ে উঠবো। সুতরাং কারো মাথা ফাটিয়ে দেওয়া আর কাউকে ধর্ষণ করা, এই দুইজন নির্যাতিতের মানসিক ক্ষতি এক নয়। একজন নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আদালতে তাঁকে চরিত্রহীনা হিসেবে প্রমাণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সুতরাং মামলা করার সাহস সঞ্চয় করা সহজ নয়। যারা ধর্ষিত হন, তাঁদের বেশিরভাগই ভালনারেবল বলেই নির্যাতনের শিকার হন। তাঁদের ব্যক্তিগত সামাজিক প্রভাব, আর্থিক সঙ্গতি ও সাপোর্ট নেটওয়ার্ক কম থাকে। সেরকম কেউ মামলা করতে হলে পরিবারের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেই পরিবার এবং এই সমাজ তখন কালক্ষেপন করতে থাকে। সামাজিক মীমাংসার নাম বলেও অনেক সময় এসবকে দীর্ঘায়িত করা হয়।
এরকম অবস্থায় ধর্ষন মামলা গ্রহণের সময়সীমা ৭২ ঘণ্টায় বেঁধে দেওয়াটা পুনর্বিবেচনার জোরালো দাবি রাখে। প্রয়োজনে আইন সংস্কার করতে হবে, ব্যাখ্যাগুলো স্পষ্ট করতে হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই যাতে কোনো ধর্ষক আইনের মারপ্যাচে ছাড়া পেয়ে না যায়, সেটাই নিশ্চিত করতে হবে যেকোনো মূল্যে। লেখক: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আপনার মতামত লিখুন :