মিরাজুল ইসলাম: ঋত্বিক ঘটক আটকে আছেন এখনো মুষ্টিমেয় চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে। ‘জেমস বন্ড’ জেনারেশনের চোখে তিনি মৃত এক সিনে-ফসিল। কেবল বাংলা সিনেমার কিছু জুরাসিক আমলের বোদ্ধাগণ তাঁকে স্মরণ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন। যদিও তাঁদের অনেকের সংগ্রহে ঝকঝকে প্রিন্টের ঋত্বিক বাবুর কোনো সিনেমাও নেই। একসময় যখন ‘চলচ্চিত্র সংসদ’ ঘরানার বোদ্ধা মানের সিনেমা দেখার পাঠশালার ছাত্র ছিলাম তখন অনেক ‘ঋত্বিক করেছি’। এখন কেবল আবছা স্মৃতি হাতড়াই। নিচের লেখাটি কয়েক বছর আগের। জন্মদিনে মেরে দিলুম। ‘এতো তাড়াতাড়ি তিনি মারা গেলেন? লোকে বলে, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর না দেওয়া আর অপরিমিত মদ্যপানেই ফুরিয়ে গেলেন এই মহান প্রতিভা। কলকাতার শতবর্ষী পুরানো শুঁড়িখানা ‘ছোট ব্রিস্টল’, যার কেতাবী নাম ছিলো ‘লেনিন সরণি শ’স ক্লাব’।
এ বারের কোণার একটা টেবিল বরাদ্দ ছিলো ঋত্বিক ঘটকের জন্য। যখন সিনেমা বানানোর টাকা ফুরিয়ে যেতো বা চিত্রনাট্য নিয়ে ঝামেলায় পড়তেন তখন হতাশা আর দুঃখ ভুলতে আশ্রয় নিতেন হুইস্কির পেয়ালার। নিয়মিত সেই বারে যেতেন। কখনো যেতেন বন্ধুবান্ধব বা ইউনিটের লোকজন নিয়ে। কিন্তু তৃপ্ত হতেন না। এমনও শুনেছি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ শ্যুটিংয়ের সময় হুইস্কির চালান না আসা পর্যন্ত কাজে হাত দেননি। অবস্থার ফেরে খুবই নিম্নমানের সুরা পানও তাঁকে করতে হয়েছে। আহা জীবন! সেই তুলনায় বর্তমান কালের ‘বাজারী-প্রতিভাবান’রা বেহেশতে বসবাস করেন। তাঁদের মনে কোনো খেদ নেই, দুঃখ নেই। দুঃখবিলাসে তাঁরা নগদে সৃষ্টিশীল কাজ করতেই থাকেন। ঋত্বিকের জন্ম দিন ছিলো ৪ নভেম্বর। তাঁর দুঃখে যারা প্রকৃত দুঃখী তারা কি আজ অন্তত ‘রুহ আফজা’ পান করবো না?’ লেখক ও চিকিৎসক