আনোয়ার হোসেন: [২] ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় বাংলাদেশ থেকে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় বিএসএফের বিরুদ্ধে।
[৩] ঠাকুরগাঁওয়ের কাঁঠালডাঙ্গী বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার মো. আবুল হোসেন জানান, রুহুল আমিন (৩৮) নামে এক বাংলাদেশি এই নির্যাতনের শিকার হন বলে খবর পাওয়ার পর সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তারা বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
[৪] রুহুল জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভদ্রেশ্বরী ভেলাপুকুর গ্রামের আক্কেল আলীর ছেলে। কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন তিনি।
[৫] সোমবার (২ নভেম্বর) রাত ৮ টার দিকে তাকে ঠাকুরগাঁও শহরের রোদেলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
[৬] হাসপাতালের চিকিৎসক ওবায়দুল হক বলেন, “রুহুল আমিনের পুরো শরীরে প্রচুর আঘাত করা হয়েছে। এতে তার পুরো শরীরে কালো কালো দাগ হয়ে গেছে এবং তার প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে। তার চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হতে বেশ সময় লাগবে।”
[৭] চিকিৎসাধীন রুহুল আমিন বলেন, সোমবার সকাল ১০টার দিকে রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নে কাঁঠালডাঙ্গীর ৩৭৪/১ এস পিলার এলাকা থেকে তাকে ধরে নেওয়া হয়।
[৮] বাংলাদেশের অন্তত ২০০ গজ অভ্যন্তরে কুলিক নদীর ধারে দু'টি মহিষ দিয়ে আমি আমার জমি চাষ করছিলাম। এ সময় কুলিক নদীতে নেমে সাদা পোশাকধারী দুই ব্যক্তি মাছ ধরা শুরু করেন। পরে তারা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, কেন আমি জমি চাষ করছি। তাদের প্রশ্নের জবাবে আমি বলি, এই জমিতে আলু ও রসুন রোপণ করব। তারা আর কথা না বলে আমার গলায় ছোরা ঠেকিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়া সংলগ্ন বটগাছের তলায় নিয়ে যান। আমার দুটি মহিষও সেখানে নিয়ে যান তারা। সেখানে এই দুই ব্যক্তির সঙ্গে তিনজন পোশাকধারী বিএসএফ সদস্য আসেন।” পরে পাঁচজন মিলে তাকে পেটায় বলে তার অভিযোগ।
[৯] রুহুল বলেন, “কেউ বাঁশের লাঠি দিয়ে, কেউ বেতের লাঠি দিয়ে পেটায়। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে। সীমান্তের কাছে তখন বাংলাদেশিরা ভিড় করছিল। তখন বিএসএফ সদস্যরা আমাকে কাঁটাতারের দরজার কাছে নিয়ে যান। তারা মহিষের জোঁয়াল খুলতে বলেন। খুলতে গিয়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। প্রায় দুই মিনিট পর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা আমাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে গিয়ে বলবি ভারতে আর কাউকে আসতে দিব না। কেউ আসলে গুলি করে মেরে ফেলা হবে’।”
[১০] বেলা দেড়টার দিকে বিএসএফ সদস্যরা তাকে ছেড়ে দেন বলে রুহুল জানান। রুহুল আমিনের ছোট ভাই রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনছারুল হক বলেন, ভারতের কিশানগঞ্জ ব্যাটালিয়নের মূকেশ ক্যাম্পের সদস্যরা তার ভাইকে নির্যাতন করেন। খবর পেয়ে তারা তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবির জগদল বিওপির সদস্যদের জানান।
[১১] বিজিবি কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, রুহুল আমিনকে নির্যাতন করার খবর পাওয়ার পর বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক হয়।
[১২] “বৈঠকে বিএসএফকে আমরা মৌখিকভাবে ঘটনার প্রতিবাদ জানাই। বিএসএফ সদস্যদের দাবি, রুহুল আমিন মহিষ নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিলেন। তার পরও তারা ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”
আপনার মতামত লিখুন :