শারফিন শাহ: প্রতিবার সাহিত্যে নোবেল নিয়ে আমাদের লেখক-পাঠক সমাজ সরব থাকে। অপরিচিত ও অপঠিত কেউ এ সম্মাননা পেলে চমক লাগে। এবারো ব্যতিক্রম ঘটেনি। আবদুলরাজাক গুরনাহ নামের যে ঔপন্যাসিক নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলেন, তাকে আমাদের কারো চেনার কথা নয়। কিন্তু একজন পাঠক ক’জন লেখককেই বা চিনতে পারেন? ২০১৬ সালে ম্যান বুকার সংক্ষিপ্ত তালিকায় ওঠে আসার পর আবদুলরাজাক এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এটা খুবই চমৎকার, পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলে যারা আপনার নামও শুনেনি, আপনার লেখা কখনো পড়েনি, তারাও আপনাকে পাঠ করতে শুরু করবে। পুরস্কার পেলে নতুন পাঠক জোটে।’ সুতরাং, আমরা যদি তাকে না পড়ে থাকি, না জেনে থাকি, নোবেল পুরস্কার পেয়ে তিনি জানান দিচ্ছেন, আমাকে পাঠ করো! আবদুলরাজাক গুরনাহ একজন শরণার্থী। আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ার জানজিবারে জন্ম নেওয়া এই লেখক ১৮ বছর বয়সে নিজ দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে ইংল্যান্ডে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন। সেখানেই পড়ালেখা ও লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। মাতৃভাষা সোহেলি হলেও ইংরেজি তার লেখার ভাষা।
ইংল্যান্ডের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। অবসর নেওয়ার পর ৭২ বছর বয়সে এলো এই পুরস্কার। তার মতে, ‘অভাবনীয়, আমি চা করছিলাম। এরই মধ্যে এমন খবরটা এলো, দারুণ একটা ব্যাপার ঘটে গেলো আমার জীবনে।’ আবদুলরাজাক তার উপন্যাসে ঔপনিবেশিকতা, উদ্বাস্তু জীবন, আত্মস্মৃতি, অভিবাসন প্রভৃতি বিষয় গভীরভাবে তুলে এনেছেন। তার লেখায় শেকসপিয়ার, দেরিদা, ওল সোয়েনকা, সালমান রুশদীর প্রভাব রয়েছে। তিনি আরব্যরজনীর গল্প, এমনকি মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের বিভিন্ন সূরা থেকেও অনুপ্রাণিত। তার কথায় আমি দেরিদার মতো বৈচিত্র্যময় জীবনে বসবাস করেছি... এমন না যে আমি ভার্জিনিয়া উলফের মতো দশ বছর বয়সে লেখক হওয়ার বাসনা করেছি। আর দশটা স্বাভাবিক কাজের মতোই একদিন হঠাৎ সাদা কাগজ নিয়ে বসলাম, তারপর লিখতে শুরু করলাম, হঠাৎ মনে হলো, এটা কী হচ্ছে?’
গুরনাহ পরিবার-বিচ্যুত মানুষ। দুঃখ, দুর্দশা তাকে বারবার তাড়িত করেছে। ৭২ বছর বয়সেও তার স্ত্রী, সন্তান, প্রেমিকা আছে কিনা জানা যায়নি। ধারণা করা হয়, তার পরিবার বলতে উপন্যাসগুলো, তিনি একজন বিপত্মীক ও চিরকুমার। গুরনাহ বহুল পঠিত লেখক নন। সমালোচকরা মনে করেন, নোবেল পাওয়ার ফলে তার পাঠক বাড়তে পারে। তবে, তিনি যে ধারায় লেখেন তা বেশ শক্তিময়। দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার মতো। লেখক ও গবেষক