আফসান চৌধুরী: একজন নিরপরাধ মানুষের হত্যা ও আমরা (১৯৭১-৭২)। লোকটা পানির মিস্ত্রি ছিলো পাড়ায়। একটু গুন্ডা গোছের কিন্তু খারাপ মানুষ না। একবার এক গুটি বসন্ত রোগীকে রিকশা করে হাসপাতালে নিয়ে যায় যখন কেউ নিচ্ছিলো না। আমার মা তাকে ভাড়ার পয়সাটা দিয়েছিলো যখন সে এসে চায়। তবে রেগেমেগে হাত চালাতো তার সমাজের মানুষের সঙ্গে কিন্তু , চুরি খুন করেনি।
[২] দেশ স্বাধীন হবার পর পর ভীষণ ওলোটপালট অবস্থা হয়। একে অন্যের নামে লাগায়, অনেক মানুষের বাড়ি লুট করায়, খুনও হয়। শেখ সাহেব দেশে না আশা পর্যন্ত অবস্থা বেশ খারাপ ছিলো। [৩] একদিন রাত ৮ টার দিকে হঠাৎ অস্ত্রধারীরা আসে এবং এই লোকটাকে বার করে বাসা থেকে। আমার বড় ভাই গিয়ে কথা বলে। ফিরে এসে বললেন, ঘরের ভেতর থাকো, তাকে মেরে ফেলতে এসেছে। একজনের পায়ের মাঝখানে মাথা চেপে ধরা, লোকটা তাকিয়ে আছে যেন অপেক্ষা করছে। তারপর মাথায় দুটা গুলি করে, তারা গাড়িতে করে চলে যায়। কেন মারলো, কিচ্ছু জানা গেলো না। যারা মারলো তারা পাড়ার ছিলো না। তাঁর মানে কেউ খবর দিয়ে এনেছে। গোটা একাত্তরে এটা ঘটেছে, শত্রæতা থেকে ডেকে এনে খুন করানো। কিন্তু পানির মিস্ত্রির কে এমন শত্রæ হবে?
[৪] যেহেতু ওই রাতে আমরা ছাড়া কেউ বের হয়নি, তাই তার পরিবার ভেবেছিলো আমরাই জড়িত। কিন্তু আমরা কিছুই জানতাম না শত্রæতা তো পরের কথা। তার পানির মিস্ত্রি ভাই বহুদিন আমাদের বাসায় কাজে আসতো না। পরে আসল খবর পায় কিন্তু ততোদিনে আমরাও পাড়া ছাড়ছি। তারাও একসময় কোথাও চলে যায়। যুদ্ধ সবচেয়ে ক্ষতি করে নিরাপরাধীকে। লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক