কাকন রেজা: যখন নিজের গর্ব করার মতো কিছু অবশিষ্ট থাকে না, তখন মানুষ অন্যের কুৎসা রটনায় ব্যস্ত হয়। একটা ছোট রেখার পাশ্বে একটি বড় রেখা যখন অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন বড় রেখাটাকে মেটাতে ব্যবহার করতে হয় ইরেজার। কুৎসা হলো সেই ইরেজার। মুশকিল হলো, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের তো গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে। আছে মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করার মতো নির্মোহ সাহস। সততা বলবো না,সততা অনেক বড় ব্যাপার। তবে সাহসের কথা স্বীকার করতেই হয়। কিন্তু সব পরিচয় ছাপিয়ে তিনি এমন একজনের ছেলে যাকে ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস অসম্পূর্ণ। সুতরাং তার গর্ব করার ঘাটতি কিছুতে নেই। কিন্তু তিনি কেন পরীমনির মতো একটা ব্যাপারে এতোটা নাক গলালেন। বিস্ময় চিহ্নই দিলাম। বিষয়টা বিস্ময়েরই। বাংলাদেশে কেন এমনটা ঘটছে, ছোট একটা ঘটনাকে ইরেজার বানিয়ে বড় ঘটনাগুলোকে মুছে দেওয়ার কোশেস চলছে। পরীমনিকে নিয়ে আলোচনা কোথায় পৌঁছেছে যে গাফ্ফার চৌধুরীর মতো মানুষ তা নিয়ে মাথা ঘামান। রীতিমত আন্দোলন হয়ে যায় এবং সেই আন্দোলন সফলও হয়। সুতরাং বিস্ময়ের চিহ্ন এখানে অপরিহার্য। যে অপরিহার্যতা সম্ভবত ইচ্ছাকৃত, পরিকল্পিত। বুঝি না, স্কুল-কলেজ খোলা হলো, কিন্তু বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা নেই।
বলা হচ্ছে দেওয়া হবে, কবে দেওয়া হবে তা জানানো হয়নি। এরমধ্যেই ক্লাস চলছে। বাংলাদেশে স্কুল-কলেজ সেটা সরকারি হোক আর বেসরকারি, সবখানেই গাদাগাদি। ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই। খোদ অ্যামেরিকাতেই স্কুল-কলেজ খোলার পর করোনা সংক্রমন বাড়ছে বলে জানাচ্ছে গণমাধ্যম। এতো বিধি মানার পরও সেখানে এ অবস্থা, বিপরীতে আমাদের? সে কথা আর নাই বললাম। কিন্তু সোহেল তাজ এটা নিয়ে কথা বললেন না। বলা উচিত ছিলো। তার সিক্সপ্যাক শরীর স্বাস্থ্য সচেতনতার কথাই বলে। সঙ্গতই তার পরীমনির চেয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতার চিন্তাই মাথায় আসা উচিত ছিলো এবং যা এক পরীমনি ইস্যুর চেয়ে অনেক বেশি জরুরি। তবে কি সেই ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলা প্রচেষ্টার আরেকটি অনুষঙ্গ সোহেল তাজের পরীমনিকে নিয়ে উক্তি? কী জানি, হতেও পারে। আমাদের দেশে আসলে কী হতে পারে, কী পারে না এটা বলা মুশকিল। আমাদের জেলা হাসপাতালগুলোর সিংহভাগেই আইসিইউ নেই, সিসিইউ নেই। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম নেই। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার নেই। অ্যাম্বুলেন্স নেই, থাকলেও অবস্থা সুবিধের নয়।
উপজেলা হাসপাতালগুলোর অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। অথচ আমাদের ফ্লাইওভার আছে, নদীর নিচে টানেল হচ্ছে। আমাদের সমুদ্রের তীর ভরে বিমান বন্দর করা হচ্ছে কক্সবাজারে। আমাদের রেডিসন আছে, সোনারগাঁ আছে। হাতির ঝিলের বাতি আছে। কিন্তু মানুষ বাঁচানোর ন্যূনতম ব্যবস্থাও অনেক জায়গায় নেই। শিক্ষা ব্যবস্থার কথা আর নাই বললাম। যা গেছে তা নিয়ে কথা বলার খুব কিছু নেই। আচ্ছা মানুষ বেঁচে না থাকলে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, টানেল এসব কি কোনো কাজের? বাচ্চারা মানুষ হতে না পারলে এসব দিয়ে আমরা কী করবো? আর বুদ্ধিজীবীরা, রাজনীতিবিদরা এসব বাদ দিয়ে পরীমনি নিয়ে থাকলে তাদের দিয়েই বা আমরা কী করবো? লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট। লেখক : কলামিস্ট