শিরোনাম
◈ জুলাই অভ্যুত্থানের সেই ঐক্য কোথায়? ◈ ব্রিটিশদের ‘নাকানিচুবানি’ দিতে ইরানের এক দশকের ‘ছায়া যুদ্ধ’: যেভাবে চলছে যুক্তরাজ্যের ভেতরে গোপন তৎপরতা ◈ চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত, আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ◈ এবার অঝোরে কাঁদলেন মিসাইল ম্যান কিম জং উন (ভিডিও) ◈ জুলাই নিয়ে ‘আপত্তিকর’ ফেসবুক পোস্ট: পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অবরোধ-বিক্ষোভ ◈ নতুন উচ্চতায় রেমিট্যান্স: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের সর্বোচ্চ প্রবাহ ◈ ডলারের দরপতনে রেকর্ড, ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনে বিশ্ববাজারে আস্থার সংকট ◈ “৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই চব্বিশের যোদ্ধাদেরও জাতি ভুলবে না” — তারেক রহমান ◈ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে বুধবার  সি‌রি‌জের প্রথম ওয়ানডে ম‌্যা‌চে  মু‌খোমু‌খি  বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৩:০০ রাত
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আহসান হাবিব: হতাশা বলতে বাস্তবে কিছু নেই, এটা আপনার বানানো একটা কাগজের সাপ!

আহসান হাবিব: ডিপ্রেশন, বাংলায় যাকে আমরা বলি হতাশা, যার বিপরীত শব্দ আশা। তবে আশার চেয়ে হতাশা নিকটবর্তী। আশা দূরবর্তী, ভবিষ্যৎ, হতাশা বর্তমান। কোনটা ভালো? হতাশা কারণ হতাশা আপনার মনে ক্রিয়া করছে, আশা স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আশা একটা পরিকল্পনা, হতাশা বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। আশা, যা সামনের কোনো ব্যাপার, হতাশা এখনকার, যাকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। হতাশা কেন, কী এর কারণ, কী করে একে দূর করা যায়Ñ এসব নিয়ে বিস্তর চিন্তা করে এখান থেকে বেরিয়ে অধিকতর ভালো অবস্থায় যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আশা আপনাকে স্বপ্ন দেখাবে এবং সেই স্বপ্নকে ছোঁবার জন্য আপনি বর্তমানকে উপেক্ষা করে সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটবেন এবং স্বপ্ন যখন আপনার হাতে ধরা দেবে না, প্রায়ই দেয় না, আপনি আশাহত হবেন এবং হতাশার গভীরে নিমজ্জিত হবেন। তাই আশা ছেড়ে দিয়ে হতাশা নিয়ে কাজ করুন। আপনি যে কাজ করেন, ধরুন, আপনি একজন খেলোয়াড়, প্রতিদিন অনুশীলন করেন এবং আপনার লক্ষ্য একজন ভালো খেলোয়াড় হওয়া। লক্ষ্য এবং আশা কিন্তু এক নয়। লক্ষ্য হচ্ছে কাজের ফলের যৌক্তিক প্রত্যাশা আর আশা হচ্ছে কাজ না করেই কোনোকিছু পাওয়ার আকাক্সক্ষা। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আপনি যদি প্রতিদিন যথাযথ অনুশীলন চালিয়ে যান, কোনো আশা ছাড়াই আপনি ফল পাবেন। কেমন ফল পাবেন তা নির্ভর করছে অনুশীলনে আপনার দেওয়া সময় এবং মনোযোগের ওপর। মনে রাখবেন শুধু আপনি নন, আরও অনেকেই চেষ্টা করছে ভালো খেলোয়াড় হওয়ার। সুতরাং আপনি একটা দৃশ্য-অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আছেন। এই প্রতিযোগিতায় আপনার স্থান কী হবে, আপনি জানেন না। কিছু একটা হবেন এবং যা হবেন তাই আপনাকে আপাতত মেনে নিতে হবে, এটাই আপনার মানসিক সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। আপনি যা, যদি আশা করে বসে থাকেন তার চেয়ে বেশি, তাহলে হতাশা আপনাকে ঘিরে ধরবে।

আসলে হতাশা বলতে বাস্তবে কিছু নেই, এটা আপনার বানানো একটা কাগজের সাপ। কারণ আপনি যে কাজ করেন, ফলাফল সেই সাপেক্ষেই হবে এবং তাই মেনে নিয়ে তার কতোটা খামতি সেটা নিয়ে আরও মনোযোগী হয়ে কাজ করে যাওয়াই হবে সঠিক পথ। এটা তো কাজের দিক, অকাজের দিকও আছে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন খেলোয়াড় কি শুধুই খেলবে, নাটক দেখবে না, গান শুনবে না, আড্ডা দেবে না? কিংবা প্রেম করবে না? করবে, এসব না করলে খেলোয়াড় হওয়া যাবে না। ওটা নীরস হয়ে যাবে। খেলা আমার প্রধান কাজ যা এসব অপ্রধান কাজগুলো তাকে আরও পূর্ণ করে তুলবে। জীবন তখনই সত্যিকারের আনন্দময় হবে। তাহলে হতাশার স্থান কোথায়? আসলে হতাশা সব সময় আপনার সঙ্গেই আছে। কারণ আপনি যে কাজ করছেন তার ফলাফলে আপনি সামান্য হলেও অতৃপ্ত থাকছেন এবং এই বোধ আপনাকে হতাশা সামান্য হলেও উপহার দিচ্ছে। যদি এই বোধ আপনার না জাগে, তাহলে জানতে হবে আপনি কাজের উৎকর্ষ বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এবং তখন সাধারণ হতাশা নয়, গভীর হতাশায় পড়ে গেছেন। কিন্তু ওই অতৃপ্তি যদি আপনাকে ঘিরে থাকে, তাহলে আপনি আরও মনোযোগী হয়ে উঠবেন এবং উৎকর্ষসাধনে ব্রতী হবেন। হতাশা কখন রোগ হয়? যখন আপনি আশা করেন অযৌক্তিক। ফলাফল যতোটুকু হওয়া উচিত, যদি আপনি আশা করেন তার চেয়ে বেশি, তাহলেই আপনি হতাশার মতো রোগে পতিত হবেন। অনেকেই আছেন যারা তাদের সন্তান নিয়ে আকাশকুসুম কামনা করে। যখন তা হয় না, তারা মানসিক রোগী হয়ে পড়ে। তারা কোনো বিষয়কে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না। এটা চলতে থাকলে একসময় আপনি গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হবেন এবং হতাশানাশক ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়বেন।

মনোবিদরা বলেন হতাশা সর্দি কাশির মতো, আসবে যাবে। সর্দি কাশি নিয়ে যেমন আমরা খুব চিন্তা করি না, হতাশা নিয়েও ভাবনার কিছু নেই। সামান্য একটু যত্ন নিলেই সেরে ওঠে। মানসিক হতাশার ক্ষেত্রে আপনাকে যত্ন নিতে হবে চিন্তায়। যে চিন্তা নেতিবাচকতা দ্বারা আক্রান্ত, হতাশা তার জন্য একটি ক্রণিক সমস্যা। তখন হতাশাকে দূর করতে হয় ইতিবাচক চিন্তা প্রতিস্থাপন করে। ইতিবাচক চিন্তা মানেই যৌক্তিক চিন্তা। ফলাফল যদি মন মতো না হয়, সেটিও তখন মেনে নিতে সমস্যা হয় না। তাহলে হতাশা থেকে মুক্ত থাকার উপায় কী? নিজের কাজটি করে যাওয়া এবং ফলাফল মেনে নেওয়া। অন্যের কাজের সঙ্গে নিজেকে তুলনা না করা। তুলনা করবেন যেন তা হয় আপনার কাজের মান এবং মূল্যায়নকেন্দ্রিক। যদি আরও উন্নতি করার স্কোপ থাকে, তার পেছনে সময় দিন। পরশ্রীকাতরতা পরিত্যাগ করা হতাশা না আসার সেরা উপাদান। মনে রাখতে হবে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ আলাদা, তাদের প্রতিভা আলাদা। এসব আলাদা আলাদা প্রতিভার সৃষ্টি পৃথিবীকে সুন্দর ও বৈচিত্রময় করেছে। আপনিও আপনার যা প্রতিভা তা বিকাশে মগ্ন থাকুন এবং পৃথিবীকে সুন্দর করার কাজে অংশগ্রহণ করুন। আশা থেকেই হতাশার সৃষ্টি। আশা পরিত্যাগ করুন। লোকে যে বলে আমি খুব আশাবাদী মানুষ কথাটা একটা বুজরুকি, ফালতু। আপনি আপনার কাজটি করে যান, ফলাফল তার পক্ষেই যাবে, বেশিও না, কমও না। আশা করলেই দেখবেন কমে গেছে, তখন হতাশা আপনাকে ছেঁকে ধরবে। আজ থেকে আশাকে বিদায় বলুন, হতাশা নিয়ে লেগে থাকুন এবং তাকে জয় করুন। লেখক : ঔপন্যাসিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়