কামরুল আহসান: আধুনিক রাষ্ট্রের এটা একটা নতুন দিক, তার নানা দুর্নীতি-দুর্গতি-দুর্দশা সামলাতে কতিপয় মোটিভেশনাল স্পিকার দরকার হয়। তারা মাঝে মাঝে দ্ ুএকটা অসঙ্গতির কথা বলেন, সেটা বলেন নিচু গলায়, কিন্তু, জোর দিয়ে যা বলেন তা হচ্ছে সমস্যা রাষ্ট্রের নয়, সমস্যা তোমার, তুমি নিজেকে পরিবর্তন করো, সফল হও, এবং দশজনের একজন হও। তাদের কাজ দশজনকে নিয়ে না, ওই একজনকে নিয়েই, বাকি নয়জনের কী অবস্থা হলো এটা তাদের ধর্তব্যের বিষয় নয়। আধুনিক রাষ্ট্র যেহেতু ব্যক্তিতে ব্যক্তিত্বে প্রচণ্ড বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্র, ব্যক্তি এখানে যেভাবেই হোক দশজনের একজন হয়ে উঠতে চায়। তা না-হলে সে টিকবে না। দোষটা এখানে আমি কোনো ব্যক্তি মোটিভেশনাল স্পিকারকে দিতে চাই না, সবার শিক্ষা ও বেড়ে ওঠা বা টিকে থাকার লড়াই সমান না, দোষটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার, রাষ্ট্র এটা কোনোভাবে বলবৎ করেছে, শুধু বাংলাদেশে নিশ্চয়ই নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রেই মোটিভেশনাল স্পিকাররা এখন বহাল আছেন নানা ফর্মে। কেউ ধর্মীয় পুরোহিত, কেউ অধ্যত্বগুরু, কেউ ক্যারিয়ার গাইড, কেউ-বা সাইকোলজিস্ট নামে। তারা সবাই আবির্ভূত হোউন ব্যক্তির মুক্তির দেবদূত হিসেবে।কিন্তু, একটা রাষ্ট্র কীভাবে চলে, রাষ্ট্রের অর্গান সম্পর্কে তাদের ধারণা বড় স্বল্প।
তাদের প্রথম কাজটাই হয় ব্যক্তিকে তারা রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। বিচ্ছিন্ন করে ফেলে কিন্তু কাজ করায় আবার রাষ্ট্রের সেবক হিসেবে, সেবক মানে রাষ্ট্রের ক্ষতগুলো তারা রেখেঢেকে রাখে, প্রয়োজনে জায়গা মতো মলম লাগায়। এরমধ্য দিয়ে দু কজন উর্ত্তীণ হয়, সফল হয়। রাষ্ট্রের আজ্ঞাবাহী হলে কোনো না কোনোভাবে আপনার সফলতা মোটামুটি নিশ্চিত। পৃথিবীর ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় তারাই সবচেয়ে ব্যর্থ যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন। ব্যর্থতা নিশ্চিত জেনেও কিছু মানুষ কেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়? কারণ তারা সভ্যতার দায়ভার কাঁধে নেন। নিজের জীবন বিপণ্ন করে তারা সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যান। তারা মোটিভেশনাল স্পিকার নন, তারা দার্শনিক। লেখক ও সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :