দীপক চৌধুরী: ২০২৩- এর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলগুলোর প্রস্তুতির নানারকম খবর এসে জায়গা করে নিয়েছে রাজনীতিতে। নির্বাচন কমিশন, দলীয় সাংগঠনিক শক্তি আর তৃণমূলের নেতাকর্মী এ তিনটি বিষয়ে এখন বিএনপি নামের দলটি চিন্তিত।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রাণ। আমি সাংবাদিক হিসেবে বলবো, শুধু আওয়ামী লীগ নয়, যেকোনো দলের প্রাণ হচ্ছে তৃণমূলকর্মী। তবে হাঁ বিএনপি তৃণমূল নিয়ে কখনো ভাবেনি। অর্থের বিনিময়ে সুবিধাবাদী ব্যক্তিদের প্রার্থী করে এবং নির্বাচনের দিন দলটি প্রার্থীকে ‘নির্বাচন বর্জন’ করতে বাধ্য করে।
গাইবান্ধায় দলীয় এক অনুষ্ঠানে পরীক্ষিত ও মেধাবী রাজনীতিবিদ ড. হাছান মাহমুদ তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাণ হিসেবে বর্ণনা করে নির্বাচনে রাজনীতির অতিথি পাখিদেরকে ভোট না দিয়ে বর্জন করতে বলেছেন। যারা জনগণের পাশে আছে ও থাকবে এমন ত্যাগী নেতাদেরকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আসলে এটাই কিন্তু মানুষের প্রাণের কথা।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কারণেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজকে গণমানুষের দল হিসেবে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অনেক নেতা দ্বিধান্বিত হয়েছেন, অনেক নেতা ভুল করেছেন, অনেক নেতা দল ত্যাগ করে চলে গেছেন, কিন্তু কর্মীরা কখনো দ্বিধান্বিত হননি, কর্মীরা সবসময় ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। কর্মীরাই দলকে টিকিয়ে রেখেছেন।’ চৌকস বক্তা হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদ অপ্রিয় হলেও সত্যকথাগুলো উচ্চারণ করে থাকেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘২০০৭ সালে যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয় তখন দলের অনেক নেতা দ্বিধান্বিত ছিলেন, অনেক নেতা ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন, অনেক নেতা আপস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিন্তু তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল বিধায় তাদের আন্দোলনে জননেত্রী মুক্তি লাভ করেছিলেন এবং সেকারণে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে’।
বাস্তব চিত্র উল্লেখ করে অত্যন্ত স্পষ্টবাদী রাজনীতিবিদ ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “দেশে আজ অনেক পরিবর্তন হয়েছে, ১৩ বছর আগের ভিডিও যদি মিলিয়ে দেখা যায়, তাহলে আজকে চেহারাগুলো অনেক সুন্দর দেখা যাবে। আগে ছেঁড়া কাপড় পরা, খালি পায়ে মানুষ দেখা যেতো, এখন যায় না, কুঁড়েঘরও খুঁজে পাওয়া যায় না। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বের কারণেই হয়েছে।”
আমরা লক্ষ্য করছি, বিএনপি এখন নানারকম ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছে। অবশ্য এটা দলটির সবসময়ের বৈশিষ্ট্য। এই দলটি ক্ষমতায় থেকে নিজেদের ভাগ্যের উন্নতি ঘটিয়েছে। মানুষের ভাগ্য পুড়েছে, কোনো অগ্রগতি হয়নি। তারা এখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রলাপ শুরু করেছে। একশ্রেণির ‘ভাড়াটে’ লোক দিয়ে বিভিন্ন টকশো, সেমিনার, সভায় বিভ্রান্তিমূলক কথা বলাচ্ছে। অতীতে বিএনপিসহ সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকার পরই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই তারা নির্বাচন করেছে। এবার মাথাব্যথা নির্বাচন কমিশন নিয়ে। জাপা আর বিএনপি আমলের নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের ‘ঘৃণা’ ছিল নানাকারণে। তখন এটি ছিল ‘পুতুল’ চরিত্রের। বর্তমানে রাষ্ট্রপতির আহ্বানে ও সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেই সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল এখন সন্দেহ করছেন ‘দল ভাঙ্গার’ চেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এটিও বিএনপির একটি হাস্যকর উক্তি। এ দলকে নতুন করে ভাঙার দরকার হবে কেনো? সন্ত্রাস-ভাঙচুর, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ আর লুটপাট ছাড়া কী আছে ওদের ঝুলিতে? দলটির নেতা সংকট, কর্মী সংকট ও সাংগঠনিক সংকট ভয়ংকর পর্যায়ে। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মঙ্গলবার থেকে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা নেতাদের সাথে বৈঠক শুরু করেছে। আলোচনায় বড় একটি সময় জুড়ে রয়েছে মারমুখী কর্মীবাহিনীর কথা। এখন সেই রকম ‘সাহসী কর্মী’ নেই দলটিতে তবে সন্ত্রাস-মারদাঙ্গা করার লোক আছে। লন্ডন থেকে বা দেশের বাইরে থেকে যতো কঠিন নির্দেশই আসুক না কেন বাস্তবতা অন্যকথা বলছে। কর্মী সংকটে থাকা দলটি একের পর এক সমস্যার মুখে। সংকটের হোতা খালেদা জিয়া আর তারেক রহমান তো আছেনই এর বাইরেও নানান সংকট।
মাঠ গরম করার লোক নেই। তিক্ত-অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ নেতা-কর্মী মনে করেন- গত একযুগ ধরে দেখা যাচ্ছে যে, জেল খাটা, জামিন নেওয়া এমন কী দলের সকল কাজই কর্মীদের নিজেকেই খরচ বহন করতে হয়ে। অনেকে অভিভাবক আর চান না রাজনীতি করে ছেলে জেলে যাক। নেতার নির্দেশে সন্ত্রাস করার পরিণতি কর্মীরা বুঝে ফেলেছেন। তাই এখন নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে চান না অনেকে। ক্ষমতায় থাকাকালীন যারা কোটি কোটি বা শতকোটিও কামিয়েছেন তারা একটি পয়সাও কর্মীর প্রয়োজনে ব্যয় করতে চান না। সুতরাং দলকে চাঙা করার সকল চেষ্টাই বৃথা। বিগত ওয়ান-ইলেভেন থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগের আমলে সবমিলে সারা দেশে প্রায় ৪০ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। বিএনপি ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চার হাজার ৫৫১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলা অনেকেই জেলে গেছেন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নাকি প্রায় দুই লাখ আসামি করা হয়। জামিন নিয়ে এখন নানাকারণে পলাতক হয়েছেন। এছাড়া ২০১৫ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে চলা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস চালানোয় মামলা দেয়া হয় বলে পুলিশ বিভিন্ন সময় বলেছে। সর্বশেষ খালেদা জিয়ার রায়ের দিনও সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর ও ত্রাস সৃষ্টির ঘটনায় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন মামলা রুজু করা হয়। পুলিশ বলছে, আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করা হলে, সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালানো হলে এটাকে অপরাধ হিসেবেই মামলা নিতে হয়।
এখন শোনা যাচ্ছে ভয়ংকর সংকটের মুখে বিএনপি। সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশন নিয়ে দলটি দুশ্চিন্তায়। তৃণমূলে তাদের কর্মী নেতা নেই। এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “নির্বাচন সরকারের অধীনে নয়, নির্বাচন হয় কমিশনের অধীনে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক