হাসান তাকী : [২] ভারতীয় অভিনেতা হলেও তিনি ওপার-এপার দুই বাংলাতেই সমান জনপ্রিয়। বাঙালির প্রাণের খুব কাছাকাছিই ছিলেন, আছেন ও থাকবেন মহানায়ক উত্তম কুমার। আজকের দিনেই ১৯২৬ সালে কলকাতার ভবানীপুরে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্মেছিলেন এই কিংবদন্তি নায়ক। তার প্রকৃত নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়।
[৩] তার প্রকৃত নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। তিনি একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, চিত্রপ্রযোজক এবং পরিচালক ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগত তাকে ‘মহানায়ক’ বলে আখ্যায়িত করে। চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও তিনি সফলভাবে মঞ্চেও অভিনয় করেছিলেন। উত্তমের সেই ভুবন ভোলানো হাসি, প্রেমিকসুলভ আচার-আচরণ এখনো মানুষের মন মাতায়। বাংলা সিনেমার আইকন হয়ে কোটি হৃদয়ে এখনো বেঁচে আছেন মহানায়ক উত্তম কুমার।
[৪] শিক্ষাজীবন শেষ না করেই কলকাতা পোর্টে কেরানির চাকরি শুরু করেন সংসারের হাল ধরতে। কিন্তু অভিনয়ের পোকাটা থেকেই গিয়েছিল মাথায়।
[৫] উত্তম কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল ‘দৃষ্টিদান’। এই ছবির পরিচালক ছিলেন নিতীন বসু। এর আগে উত্তম কুমার ‘মায়াডোর’ নামে একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন কিন্তু সেটি মুক্তি পায়নি। ‘বসু পরিবার’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তি পাবার পরে তিনি চলচ্চিত্র জগতে স্থায়ী আসন লাভ করেন।
[৬] সাড়ে চুয়াত্তর ছবিতে তিনি প্রথম অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয় করেন। এই ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সফল উত্তম-সুচিত্রা জুটির সূত্রপাত হয়।
[৭] কর্মগুণে তিনি পরিচিত ‘মহানায়ক’ হিসেবে। সারাজীবনে দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। অগ্নিপরীক্ষা, সপ্তপদী, ঝিন্দের বন্দী, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, নায়ক, পথে হলো দেরি, হারানো সুর, সাগরিকা, পুত্রবধূ, চাঁপা ডাঙার বৌ, রাই কমল, চৌরঙ্গী, অমানুষ, স্ত্রী, নিশিপদ্ম, বন পলাশীর পদাবলী, মরুতীর্থ হিংলাজ, নায়ক ও ওগো বঁধু সুন্দরী তার আলোচিত চলচ্চিত্র।
[৮] ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই তার মৃত্যুর পর অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, হলিউডের যেকোনো অভিনেতার সঙ্গে উত্তম কুমারের তুলনা করা যায়। ১৯৫৪ থেকে আজো বাঙালির জীবনে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বি ম্যাটিনি আইডল। তার অভিনয় ভঙ্গি প্রায়ই অনুকরণ করতে দেখা যায় বিভিন্ন অভিনেতাদের।
[৯] সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া দেবী, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর-সহ প্রতিটি নায়িকার সঙ্গে চুটিয়ে অভিনয় করে গিয়েছেন।
[১০] নায়ক থেকে খলনায়ক প্রতিটি চরিত্রেই মন জয় করেছেন। বাঙালির কাছে উত্তম কুমার অতি আহ্লাদের, খুব কাছের ও প্রিয়। সাদা কালো হোক বা রঙিন ছবি উত্তম কুমারের জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে কাল থেকে মহাকালে ছড়িয়ে।
[১১] ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত শৌখিন ছিলেন মহানায়ক। তার নিষ্ঠাই বারেবারে প্রমাণ করেছে শ্রেষ্ঠত্বের। নায়ক ছবিতে তার সংলাপ বারেবারে দর্শদের আকৃষ্ট করে 'I will go to the top' অর্থাৎ আমি সর্বশ্রেষ্ঠ হব একদিন ৷ এই স্বপ্নই হয় দু 'চোখে মেখে বাঙালি শুরু পথ চলা।
[১২] তিন ভাই-বোনের মধ্যে উত্তম কুমার ছিলেন সবার বড়। তার পিতার নাম সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম চপলা দেবী। তার ছোট ভাই তরুণ কুমার একজন শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন। তারা একত্রে বেশ কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সোনার হরিণ, জীবন-মৃত্যু, মন নিয়ে, শেষ অঙ্ক, দেয়া-নেয়া, সন্ন্যাসী রাজা, অগ্নীশ্বর ইত্যাদি। উত্তম কুমার গৌরী দেবীকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র সন্তান গৌতম চট্টোপাধ্যায় মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ক্যান্সারে মারা যান। গৌরব চট্টোপাধ্যায় উত্তম কুমারের একমাত্র নাতি। তিনি বর্তমানে টালিগঞ্জের জনপ্রিয় ব্যস্ত অভিনেতা।
[১৩] ১৯৬৩ সালে উত্তম কুমার তার পরিবার ছেড়ে চলে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বসবাস করেন। এই নায়ক ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই কলকাতার টালিগঞ্জে মৃত্যুবরণ করেন।