সুজন কৈরী: [২] রিকশাচালক সেজে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে সংঘবদ্ধ চোর চক্র। এই চক্রটি রিকশাচলকের ছদ্মবেশে সড়কে দাড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ি টার্গেট করে। গাড়ির চালক বা মালিক একটু এদিক-সেদিক গেলেই রিকশা চালকবেশি চোর চক্রটি গাড়ির লুকিং গ্লাস, কভার, গ্লাস কভার বিটসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করে পালিয়ে যায়।
[৩] এমন একটি চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগ। সেইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে গাড়ির চোরাই যন্ত্রাংশ কেনার অভিযোগে দুজন দোকানদারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
[৪] পুলিশ বলছে, সম্প্রতি গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়। এরই প্রেক্ষিতে তদন্ত করে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনায় জড়িত দুজন চোর ও চোরাই মালামাল বিক্রি চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
[৫] পুলিশ জানায়, চোর চক্রের সদস্যদের নজর থাকে সড়কে পার্কিং করা গাড়ির প্রতি। সুযোগ বুঝে গাড়ির পাশে রিকশা থামিয়ে আড়াল তৈরি করে দ্রুত খুলে নিচ্ছে লুকিং গ্লাস কভার, গ্লাস কভার বিটসহ বিভিন্ন অংশ। তারপর গদির নীচে ফাঁকা জায়গায় সেগুলো ভরে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে বিক্রি করে থাকে।
[৬] সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দারা দেখতে পেয়েছেন, চোর চক্রের চার সদস্য তিনটি রিকশা নিয়ে বের হন। সড়কে পার্কিং করা পরপর দুটি গাড়ি ঘিরে ফেলে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী গাড়ির সামনে-পেছনে রিকশা নিয়ে অবস্থান করে, চলে শলা-পরামর্শ। চারপাশ দেখে, দলের সর্দারের ইঙ্গিতে টার্গেট গাড়ির সামনের পাশ ও ডানদিকে তিনটি রিকশা থামিয়ে আড়াল তৈরি করে খুলে নিতে থাকে যন্ত্রাংশ। হঠাৎ একটি গাড়ি চলে এলে রিকশা সরিয়ে যাতায়াতের সুযোগ করে দেয় চোর চক্রের সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে নতুন করে অবস্থান নেয় তারা। আরও কিছু অংশ খুলে নিয়ে এক এক করে আলাদা হয়ে যায় তিনটি রিকশা।
[৭] ক্ষতিগ্রস্ত একটি প্রাইভেট কারের মালিক নুরুল আলম অলক বলেন, সড়কেই গাড়ি রাখতে হয়। তবে, সিটি কর্পোরেশন যদি গাড়ি রাখার জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেয় তাহলে আর এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতো না।
[৮] পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে চোর চক্রের সদস্যরা জানিয়েছেন, রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুরে রিকশাচালক সেজে গাড়ির বিভিন্ন অংশ চুরি করছে একাধিক দল। এছাড়া মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা চালক সেজেও চুরিতে জড়িত রয়েছে অনেকগুলো চক্র।
[৯] ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের উত্তরা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার বদরুজ্জামান জিল্লু বলেন, চুরির সময় তারা দুই থেকে তিনটি রিকশা ব্যবহার করে। এ সময় যারা রিকশাচালক ও যাত্রী সেজে থাকে তারা প্রত্যেকেই চোরচক্রের সদস্য। যে গাড়িটিকে তারা টার্গেট করে তার আশেপাশে রিকশা দাঁড় করিয়ে আড়াল তৈরি করে দ্রুত চুরির কাজ শেষ করে।
[১০] গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করে রাজধানীর অন্তত চারটি মার্কেটে বিক্রি করছে চোররা। গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরিতে জড়িত অন্য চক্রগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া অবৈধ কেনাবেচায় জড়িত দোকানদারদেরও আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা করছেন তারা।
[১১] ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আছমা আরা জাহান বলেন, ধোলাইখাল এবং উত্তরার বিভিন্ন মার্কেটে এসব চোরাই পার্টস বিক্রি করা হচ্ছে। তবে যারা এসব চোরাই পার্টস কিনছেন তারাও পুলিশের নজরদারিতে আছেন। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
[১২] নো পার্কিং জোনে গাড়ি পাকিং না করা এবং গাড়ি পার্ক করলে অবশ্যই গাড়িতে চালক রাখার পরামর্শ দিয়ে এডিসি আছমা আরা জাহান বলেন, ট্রাফিক আইন মেনে চললে এমন ঘটনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। সূত্র: ডিবিসি টিভি
ভিডিও লিঙ্ক-