সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু: ৪ দলীয় জোট সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে লাগাতার কঠোর হরতাল কতোদিন ছিল? আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনির্দিষ্টকালের হরতাল, অবরোধ,অগ্নিসংযোগ কতোদিন ছিল? সাতদিন, দশ দিন, পনেরো দিন? না তারও চেয়ে অনেক বেশি দিন ছিল। পরিবহন, ব্যবসা কী তখন সচল ছিল? না ছিল না। ১৯৯৮ সালের বন্যায় সারাদেশ কতো দিন পানির নীচে ছিল? মনে নেই! প্রায় এক মাসের মতো ছিল। সবকিছু স্তব্ধ ছিল, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। বন্যায় শতকরা ৯৯ ভাগ মসজিদ, মন্দিরের মেঝেতে পানি উঠেছিল। সড়ক মহাসড়কে ছিল কোমর পানি।
হরতাল, অবরোধ, বন্যা কোনটাইতো ১৪ দিনের কম ছিল না। তখন ব্যবসায়ীরা বাঁচেনি? দিনমজুররা টিকে থাকেননি? নিজ নিজ বাড়িতে নামাজ,পূজা হয়নি? হয়েছে। মানুষ বেঁচে থেকেছে, ব্যবসায়ীরাও শেষ হয়ে যায়নি। এখন দলবেঁধে মসজিদে না গেলে, মন্দিরে না গেলে ধর্ম থাকে না তখন দেশ মধ্যআয়ের দেশ ছিল না, তবুও সব টিকে ছিল, বেঁচে ছিল। এখন দেশ মধ্যআয়ের দেশের তালিকায়। অথচ এখন,এই মহামারীকালে ১৪ দিনের তথাকথিত লকডাউনের তৃতীয় দিন থেকে একশ্রেণির মানুষ, মিডিয়া, দোকানদারের ‘মারা গেলাম’, ‘মানুষ না খেয়ে মারা যাবে’ ‘ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে’ বিলাপে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। তবে কি আগের সময়ে টাকার অংকে আয় কম থাকলেও সঞ্চয় ভালো ছিল?
আয়ের বিপরীতে ব্যয় কম হতো বলে সঞ্চয়ের টাকায় বিপদ পার করেছে সবাই। সত্যটা কি তাই? এই যে ঢাকার শহর, চলমান ‘লকডাউন’ অমান্য করে যতো মানুষ রাস্তায় হাঁটছেন, রাস্তায় নামা প্রাইভেটকার কি তার চেয়ে খুব বেশি কম? মোটেই কম না। গরিব মানুষেরা না হয় পেটের দায়ে পথে নেমেছেন, কিন্তু এই গাড়িওয়ালাদের তো পেটের ভাতের অভাব নেই, এরা কোন দুঃখে পথে নেমেছেন? প্রশ্নটা তাদের করবেটা কে? প্রতিদিন শত শত মৃত্যু, আহাজারী, অক্সিজেনের জন্য পাগলের মতো ছুটে বেড়ানোর দৃশ্য দেখেও মাত্র ১৪টা দিন ঘরে থাকার ধৈর্য, কষ্ট করতে আমরা রাজি নই। মাস্ক পরতে আমরা রাজি নই। নিরাপদ দূরত্ব মানতেও রাজি নই। যতো সমস্যা করোনাকালের এই ১৪ দিনে! কোনোটাই মানা যাবে না।
মানুষ বন্দীদশা, নিয়ম, কোনো দেশে, কোনোকালেই মানতে চায়নি। বুঝিয়ে, আইনের প্রয়োগ করে মানুষকে নিয়ম মানতে শেখানো হয়েছে,বাধ্য করা হয়েছে,আমরা কোনোটাই পারিনি, করিনি। এখন আগের কথা পরে বলে নেই। হরতাল, অবরোধ মানুষ কেন মেনেছে? মেনেছে যারা হরতাল অবরোধ ডেকেছে তাদের কর্মী বাহিনীর প্যাঁদানীর ভয়ে, ভাঙচুর,অগ্নিসংযোগের ভয়ে। বন্যার বন্দীত্ব কেন মেনেছে? মেনেছে বন্যা তাড়ানোর ক্ষমতা ছিল না বলে। প্রায় মাসব্যাপী ভয়ংকর বন্যায় শ্রমজীবী, দিনমজুর, হতদরিদ্র মানুষ বেঁচেছিল কী করে?
বেঁচেছিল তখন মানুষ অনেকটাই মানুষ ছিল। পাড়া-মহল্লার তরুণ, ব্যবসায়ী, ধনবান মানুষ ত্রাণ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকার রিলিফ দিয়েছে। আর এখন লালমাটিয়ার মেহমানখানার লিজা, টিএসসির সৈকত, বরিশালের ডাক্তার মনীষা চক্রবর্তীদের মতো হাতেগোনা দুদশজন মানবপ্রেমী ব্যক্তিত্ব ছাড়া বাকিরা কেউ মানুষের পাশে নেই। মানুষ মানবিকতা হারিয়েছে। হাজার হাজার কোটিপতি, শত শত গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ,গার্মেন্ট মালিক সব নিজ নিজ জীবন ও টাকাকে যক্ষের ধনের মতো আগলে বসে আছে।
ডুব মেরে বসে আছে, চুরি আর লুটের টাকায় হিমালয় গড়া দুর্বৃত্তরা। এরা নিজ নিজ এলাকায় শত শত লিজা, সৈকত, মনীষাদের হাতে খাবার কেনার টাকা তুলে দিয়ে মানুষকে বলতে পারতো, চিন্তা করবেন না, খাবার আমরা পৌঁছে দেবো,আপনারা মাত্র ১৪টা দিন ঘরে থাকুন। এসব তো না-ই,লকডাউনের বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করানোর কথা যাদের, তারাও তিনচারদিনেই পুঁইয়ের ডগার মতো নেতিয়ে পড়ছেন! ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :