ডা. শুসমা রেজা: শ্রমিকের রক্তে গড়া দেবালয়ে দেবতারা হয়তো সুখেই আছে! তাই বুঝি শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা দিতেই এদের যত গড়িমসি!
বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডঃ মাকসুদ হেলালী ন্যাশনাল ফায়ার কোড প্রণেতাদের একজন। স্বভাবতই কোথাও আগুন লাগা বা গ্যাস বিস্ফোরণের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আমাদের বাড়িটা এক কথায় সাংবাদিকময় হয়ে ওঠে।
আজ সেরকম একটা দিন। কারন আজ আবার আগুন লেগেছে। সেজান জুস ফ্যাক্টরির ৫০ জনের অধিক শ্রমিক আগুনে পুড়ে আজ চোখের নিমিষে ভস্ম হয়ে গেল!
প্রতিবার শ্রমিকদের অপমৃত্যু আমাদের সবাইকেই কষ্ট দেয়, কিন্তু বাবাকে হয়তো আরেকটু বেশি আপ্লুত করে কারন তিনি কাছ থেকে বছরের পর বছর এটা নিয়ে কাজ করেছেন।
বাবা ভীষণভাবে বিশ্বাস করেন যে, চাইলেই এই ক্যাজুয়াল্টিগুলো থামানো যায়। শুধু প্রয়োজন একটুখানি সদিচ্ছা! আর সেটারই যেন হাহাকার সংশ্লিষ্ট প্রতিটা সেক্টরে। পরতে পরতে দুর্নীতি। তাঁর মতে, এটা এক জায়গার আগুন আসলে নয়, আমাদের Collective Failure এর একটি বহিঃপ্রকাশ।
চিন্তা করুন তো একবার! কতগুলো পরিবারকে অন্ধকারে ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন মানুষগুলো! হয়তো এঁদের আজ ঘরে ফিরে পরিবারের সবাই মিলে রাতের খাবার খাওয়ার কথা ছিল, অপেক্ষায় ছিল স্ত্রী, সন্তান, পরিবার! কালকে পরিবারের মানুষদের খাবার যোগাড়ের একমাত্র মানুষটাই হয়তো আজ চিরতরে হারিয়ে গেল! খবরে দেখতে পাচ্ছি, বেশিরভাগ শিশু শ্রমিকদের বয়স নাকি ছিল ১০-১২ এর মধ্যে!
আমাদের পুঁজিপতিদের কি ক্ষতি এই মৃত্যুতে? কিচ্ছুনা! শ্রমিক মরবে, ভুখা-নাংগা শ্রমিক আসবে। অভাবীর দেশে শোকের সময় কোথায়?
এদের জীবনের মূল্য কত জানেন? যতদূর জানি, Bangladesh Labour Act 2006 অনুযায়ী - মাত্র ২ লক্ষ টাকা! অর্থাৎ সজীব গ্রুপ কে তাদের এসব নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতে হবে সব মিলিয়ে মাত্র ১ কোটি টাকা ।
আহারে জীবন!
শ্রমিকের রক্তে গড়া দেবালয়ে দেবতারা হয়তো সুখেই আছে! তাই বুঝি শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা দিতেই এদের যত গড়িমসি!