চিংমং মারমা: আমি যে বছর কুষ্টিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাই, সে বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এক যুবকের কাটা মুণ্ডু পাওয়া গিয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে জোড়াদহ আর ভায়না নামে দুটো জায়গা আছে। লোকজন বলতো, ‘জোড়াদহ-ভায়না সেখানে কেউ যায় না, গেলেও কেউ ফিরে না।’ গা শিউরে ওঠা অনেক নৃশংসতার কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরতো। পুরো দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে চরমপন্থীদের আধিপত্য ছিলো। কোনো কোনো এলাকা স্বনামে স্বহিমায় উদ্ভাসিত ছিলো! আজকাল ব্রাহ্মবাড়িয়ার লিজেন্ডদের প্রায়ই মিডিয়ায় দেখা যায়। সেই সময় লিজন্ডারি জেলা আরও বেশি ছিলো। শুনেছি পদ্মার চরাঞ্চল দখল করতে মাইকে এলান করা হতো, ‘আগামী বুধবার বাদ যোহর সোহেল গ্রুপ আর রকি গ্রুপের ফাইট হবে। আপনারা হাটে আসবেন না।’ তবে খটকা এখানেই যে এই সন্ত্রাসের জন্য কোনোদিন সেসব এলাকায় আর্মি অপারেশন হয়নি। চরমপন্থীরা এমনকি রাষ্ট্রের কাছে ইনসারজেন্ট হিসেবে বিবেচিত ছিলো না। কিন্তু মার্ক্সবাদী না হয়ে তারা যদি ভিন্ন কোনো জাতির জাতীয়তাবাদী হতো, যারা আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার বা মৌলিক মানবাধিকারের লড়ছে, তাহলে সেখানে নিশ্চিতভাবে আর্মির কাউন্টার ইনসারজেন্সি অপারেশন হতো। রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যার নাম দেয়া হতো দেশপ্রেম।
ঢাকার মহল্লার পানের দোকানদার, আড়তদার, ব্যবসায়ী, চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান সবাইকেই চাঁদা দিতে হয়। তাদের আর্মি পাহারা দেয় না, বেতন দিয়ে রাখা চৌকিদারও না। আর খাগড়াছড়িতে বিদ্যানন্দ ক প্যাকেট খাবার বিলোবে তার জন্য আর্মির পাহারা লাগে! বিদ্যানন্দ খাবার বিলানোর সঙ্গে সঙ্গে জেনোফোবিয়া, ত্রাস আর সন্দেহ বিলিয়েছে দেদারসে। আমার জানা মতে, তাদের বান্দরবানে কাজ আছে, সেখানে তারা পাহারা নিচ্ছে তো ঠিকঠাক? আগে কোথাও দেখলাম তো তাদের আর্মিরা পাহারা দিচ্ছে! আমার জানামতে, পাহাড়ের আনাচে কানাচে প্রতি বছর প্রচুর ত্রাণ-সাহায্য টিম আসে শহর থেকে। তাদের কখনো পাহারা লাগেনি। তা বিদ্যানন্দের খাবারের প্যাকেট কি সোনায় বাঁধা ছিলো নাকি এবার? সম্প্রতি মূলধারার মিডিয়াসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় আদিবাসীদের নিয়ে জেনোফোবিয়া, হেইট রেটরিক, জাতিগত বিদ্বেষ, রেইসিজম ছড়ানো বহুগুণে বেড়েছে। ক্রিমিনালাইজ করা হচ্ছে আদিবাসীদের। এই ক্রিমিনালাইজেশন প্রক্রিয়ায় পুরো পাহাড়ি জনপদকে আর তার মানুষদের নিয়ে অবিরাম ডিসইনফরমেশন ছড়ানো হচ্ছে। গোয়েবলস এর নীতিতে রাষ্ট্রের প্রচারযন্ত্রগুলো জেনোফোবিয়া, রেইসিজম, ত্রাস, সন্দেহ, অবিশ্বাস আর বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এর পরিণতি কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিসইনফরমেশন, মিসইনফরমেশন শনাক্ত করা শক্ত। সময় থাকতে মিডিয়া আর মিডিয়া নিয়ন্ত্রণকারী অথরিটির আরও দায়িত্বশীল আচরণ দরকার। বহুত্বকে ধারণ করার মতো বৃহত্ত্ব অর্জন করা চাট্টিখানি কথা নয়। মাল্টিএথনিক, মাল্টিকালচারাল দেশ হবার পথে আগাতে হলে ঐতিহাসিক ভুল শোধরাতে হবে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :