বাবলু ভট্টাচার্য: বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকে কখনো নির্দেশক, কখনো সংগঠক, শিক্ষক, সমালোচক, অভিনতা, বহুরূপে দেখা গেছে তাকে। তিনি নাট্যজন আতাউর রহমান।
স্কুল থেকেই সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে নিয়মিত নাট্যচর্চার একজন কর্মী হিসেবে এগিয়ে নিতে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নটীর পূজা’ নাটক দর্শনে প্রথম মঞ্চপাঠ শুরু আর জুলভার্নের ‘টুয়েন্টি থাউজেন্ডস লিগস আন্ডার দ্য সি’ পাঠের মধ্য দিয়ে শিল্পজগতে প্রবেশ করেন।
ষাটের দশকে আতাউর রহমান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সে সময় ২৬ মার্চ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। এরপর ১৯৬৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর জিয়া হায়দারের অনুপ্রেরণায় থিয়েটারে যোগদান করেন। এবং তাঁর অনুপ্রেরণাতেই নতুন নাটকের দল ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’-এর জন্ম হয়।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সাল, নিজ দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে ‘বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকটি নির্দেশনা দেবার মধ্য দিয়ে নাট্য নির্দেশনার শুরু, এরপর তিনি নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের লেখা ‘বাকী ইতিহাস’। এ নাটকের মধ্য দিয়েই ৭২ সালে এদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাটক প্রদর্শন শুরু হয়। এরপর নিজের দলে এবং অন্য দলের হয়েও অসংখ্য নাটকে নির্দেশনার কাজ করেছেন।
দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে মঞ্চে আতাউর রহমানের পদচারণা। নির্দেশনা দিয়েছেন ‘বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘ভেঁপুতে বেহাগ’, ‘মাইলপোস্ট’, ‘সাজাহান’, ‘গডোর প্রতিক্ষায়’, ‘কবর দিয়ে দাও’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ইর্ষা’, ‘হিম্মতি মা’, ‘রক্তকরবী’, ‘নাট্যত্রয়ী’, ‘ত্রয়লাস ও ক্রেসিদা’, ‘এখন দুঃসময়’, ‘অপেক্ষমান’।
নিজ দলের বাইরে উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা ‘আগল ভাঙার পালা’, ‘গণনায়ক’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘ডেড পিকক’, ‘দন্ডধর’, ‘ম্যাকবেথ’, ‘তাসের দেশ’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘নারীগণ’, ‘রুদ্র রবী’ ও ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ’। আজ পর্যন্ত তার নির্দেশিত নাটকের সংখ্যা ত্রিশের কোটা পেরিয়েছে, তিনি এখন বাংলার মঞ্চাঙ্গনের জনপ্রিয় ও সফল নাট্যনির্মাতাদের অন্যতম। মঞ্চে তার নির্দেশিত প্রায় প্রতিটি প্রযোজনাই জনপ্রিয়।
মঞ্চ নাটকের নির্দেশনার পাশাপাশি তিনি অভিনয়ও করেছেন সমানতালে। নাগরিকের হয়ে অভিনেতা হিসেবে তিনি এক হাজারের অধিক সময় মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছেন। একাধারে মঞ্চ, রেডিও ও টেলিভিশনে সমান পদচারণা তার। সেই সঙ্গে নাট্য বিষয়ক বই রচনা, নাট্যসমালোচনা, উপস্থাপনা, নাট্য শিক্ষক হিসেবে পাঠদান, টেলিভিশন নাট্যকার, প্রবন্ধকার, বক্তা সব ক্ষেত্রেই রয়েছে তার সরব পদচারণা।
নবনাট্য আন্দোলন, গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনসহ দেশের সকল সংস্কৃতিক আন্দোলনে রয়েছে তার অসামান্য অবদান। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অর্জন করেছেন অসংখ্য পুরস্কার, ২০০১ সালে নাট্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য দেশের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ২১ পদক অর্জন করেন আতাউর রহমান। আতাউর রহমান ১৯৪১ সালের আজকের দিনে (১৮ জুন) নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :